নির্বাচনের ফলে স্পষ্টভাবে জো বাইডেন বিজয়ী হওয়ার তিন দিন কেটে গেলেও তাকে স্বাগত না জানিয়ে ভোট কারচুপির অভিযোগ নিয়ে আইনি লড়াই শুরু করেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খোদ রিপাবলিকান পার্টির অনেকেই অবস্থান নিয়েছেন। ফলাফল মেনে নিতে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের কেউ কেউ তাকে বোঝানোরও চেষ্টা করছেন। কারও কথায় কান দিচ্ছেন না তিনি। দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এসব করে পরিস্থিতি ঘোলা করা ছাড়া কিছু করতে পারবেন না ট্রাম্প। এদিকে বাইডেন শিবিরও ট্রাম্পের আইনি লড়াই মোকাবিলার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। খবর সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস ও এএফপির।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। ট্রাম্পের একগুঁয়েমির কারণে সেই সৌন্দর্য ম্লান হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে গতকাল মঙ্গলবার সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, ট্রাম্প কখন বিদায় নেবেন- এটি আর কোনো প্রশ্ন নয়। বরং বিদায়ের আগে তিনি পরিস্থিতি কতটা ঘোলা করবেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন- সেটিই দেখার বিষয়। আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ইস্যুতে ক্ষমতা চর্চার সুযোগ থাকছে তার হাতে। এই সময়ে কেন্দ্রীয় তহবিল ব্যবহারের অনুমতি পাবেন না বাইডেন। আগামী ৭০ দিন ট্রাম্পের বিভিন্ন পদক্ষেপে সংকট সৃষ্টি হতে পারে। নির্বাচনের ফল নিয়ে আগেই আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তার সঙ্গে এখন শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তাও যোগ দিয়েছেন। স্থানীয় সময় সোমবার ট্রাম্প শিবির ভোট কারচুপির অভিযোগে আনুষ্ঠানিক আইনি লড়াই শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। এ দিন এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কেইলি ম্যাকএনানি বলেন, 'নির্বাচন এখনও শেষ হয়নি। শেষ হওয়ার এখনও অনেক বাকি। আইনি লড়াই মাত্র শুরু হয়েছে।'
নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কৌঁসুলিদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কারচুপির অভিযোগ বিষয়ে ম্যাকএনানি কোনো প্রমাণ তুলে ধরতে পারেননি। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন কমিশন আগেই ট্রাম্প ও তার টিমের অভিযোগ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে।
ম্যাকএনানি অভিযোগ করেন, পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়াতে রিপাবলিকান পর্যবেক্ষকদের কেন্দ্রে পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি। কর্মকর্তারা ডেমোক্র্যাট ভোটারদের তাদের ভুলভাল ব্যালট ঠিক করে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ম্যাকএনানির এই অভিযোগ বিষয়ে ভোট গ্রহণ কার্যক্রমের প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে ভিন্ন কথা। ফিলাডেলফিয়া এনকোয়ারার বলছে, কেন্দ্রে উভয় দলের পর্যবেক্ষকরাই উপস্থিত ছিলেন। তবে বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভোট গণনার টেবিলের ১৩ থেকে ১০০ ফুট দূরে ছিলেন তারা। এই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিকে রিপাবলিকানরা কারচুপির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন।
সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের ভোট পুনর্গণনার অনুরোধ করার শতভাগ অধিকার রয়েছে। সংবিধানের আলোকে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোর এ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।
ট্রাম্পের পালে আরেকটু হাওয়া দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তদন্তের অনুমতি দিয়েছেন। প্রমাণহীন এই অভিযোগ তদন্ত করার অনুমতি দেওয়ার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন দেশটির বিচার বিভাগের নির্বাচন-সংক্রান্ত ফৌজদারি অপরাধবিষয়ক শীর্ষ আইনজীবী রিচার্ড পিলগার। রাজ্যগুলোতে চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করা উচিত বলে অ্যাটর্নি জেনারেল প্রসিকিউটরদের জানিয়েছেন। এর প্রতিবাদে পদত্যাগ করা পিলগার বিচার বিভাগের অন্যান্য পদে থাকবেন কিনা, তা স্পষ্ট করেননি।
গত ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯তম বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেনের কাছে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প। এর পরই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন তিনি। এই অভিযোগে ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে পেনসিলভানিয়াসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে মামলা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের টালবাহানার কারণে এখনও ক্ষমতা হস্তান্তর শুরু হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার কথা। এর আগেই বিদায়ী ও আসন্ন প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটি সেরে নিতে হয়। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনও হার মেনে না নেওয়ায় সেই সমন্বয় প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। সোমবার বাইডেন শিবিরের এক কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জিএসএর প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও চিন্তা করছেন তারা।
টিকার খবর চেপে যাওয়ার অভিযোগ ট্রাম্পের :যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং ফাইজার ইচ্ছাকৃতভাবেই করোনার টিকার সফলতার ঘোষণা দিতে দেরি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। নির্বাচনের আগে টিকার খবর জানালে তা রিপাবলিকানদের সুবিধা করে দিতে পারে- এই ভয়ে এফডিএ এই ইচ্ছাকৃত ঘোষণা বিলম্বিত করেছে বলে সোমবার এক টুইটে অভিযোগ করেন তিনি।
ট্রাম্পের টুইটের কয়েক ঘণ্টা আগে সোমবারই যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার প্রাথমিক মূল্যায়নে তাদের টিকা ৯০ ভাগেরও বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করে। ফাইজার জার্মানির বায়োএনটেকের সঙ্গে মিলে টিকাটির চূড়ান্ত পরীক্ষা চালাচ্ছে। তার মধ্যেই এই সুখবর এসেছে।
ট্রাম্পের অভিযোগ- 'যদি বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকতেন তাহলে আপনারা আগামী চার বছরেও এই ভ্যাকসিন পেতেন না। এফডিএ-ও এত দ্রুত এর অনুমোদন দিত না। আমলাতন্ত্র হয়তো লাখ লাখ লোকের জীবন ধ্বংস করে দিত।
ট্রাম্প অভিযোগ করলেও ফাইজারের টিকার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাইডেন। তিনি বলেছেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হওয়ার এখনও কয়েক মাস বাকি।


বিষয় : যুক্তরাষ্ট্রে পরিস্থিতি ঘোলা করতে চাইছেন ট্রাম্প

মন্তব্য করুন