হামাসের গোপন সম্পদের কাছে অসহায় ইসরায়েল

ছবি-ব্লুমবার্গ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ | ২২:১৩ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ | ২২:১৩
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের চেয়ে হামাস অনেকটা পিছিয়ে। তবে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র এ সংগঠনটির খুব অস্বাভাবিক একটি সম্পদ রয়েছে। তা হলো গোপন ভূগর্ভস্থ টানেলের বিশাল নেটওয়ার্ক। গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণের পর ইসরায়েল টানা বোমা হামলা চালিয়ে গাজাকে মৃত্যুকূপ আর ধ্বংসস্তূপের নগরীতে পরিণত করেছে। তাদের প্রতিশোধ পরিকল্পনাকে আসলে জটিল করে তুলেছে এ টানেল। খবর ব্লুমবার্গের।
গোপন টানেলের দৈর্ঘ্য কতটুকু, কোন কোন এলাকা দিয়ে এটি বিস্তৃত, তা নির্ণয়ে ২০১৪ সাল থেকে কাজ শুরু করে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকার সঙ্গে ইসরায়েলের ৬০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। দীর্ঘ এ এলাকায় ভূগর্ভস্থ বাধা তৈরি করতে এরইমধ্যে ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে ইসরায়েল। এখানেই শেষ নয়, নতুন করে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা তা শনাক্ত করতে একটি সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে খরচ করতে হয়েছে আরও কয়েক মিলিয়ন ডলার।
মূলত ইসরায়েল তার অঞ্চলকে দুর্ভেদ্য ও নিরাপদ করতে সীমান্তে এ ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু গোপন এই গিরিপথগুলো আন্তঃসীমান্ত আক্রমণে গত ৭ অক্টোবর ব্যবহার করেছে হামাস। নজিরবিহীন এ হামলা বিমান, স্থল এবং সমুদ্রপথে অনুপ্রবেশের মতোই ছিল। এর জবাবে গাজায় স্থল আক্রমণে ইসরায়েলের পরিকল্পনা জটিল করে তুলেছে টানেল। হামাস ভূগর্ভস্থ টানেলে ইসরায়েলি জিম্মিদের রেখেছে, শুধু এ একটি কারণেই বিষয়টি জটিল নয়। আরও কারণ রয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস বলেছেন, গাজা উপত্যকাকে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য একটি স্তর এবং তারপর হামাসের জন্য আরেকটি স্তর হিসেবে ভাবুন। হামাস যে দ্বিতীয় স্তরটি তৈরি করেছে, আমরা সেই দ্বিতীয় স্তরে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
তবে, ভূগর্ভস্থ এ গোলকধাঁধা নির্ণয় করা খুব সহজ কাজ নয়। এ টানেলের বিষয়ে হামাস ছাড়া আর কেউই পুরোপুরি জানে না। ফলে আগের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। ২০২১ সালে ইসরায়েল বলেছিল, তারা গাজার তলদেশে ১০০ কিলোমিটার সুড়ঙ্গ ধ্বংস করেছে। হামাস তখন জোর দিয়ে জানায়, তাদের ৫০০ কিলোমিটারের একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পেরেছে ইসরায়েল।
তেল আবিবভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষণার ফল বলছে, ২০১৪ সালে ইসরায়েল সরকার এলবিট সিস্টেমস এবং রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমসে তৈরি অত্যাধুনিক টানেল-ডিটেকশন সিস্টেম বা টানেল শনাক্তকরণ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করে। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তিতে গম্বুজ আকৃতির সেন্সর তৈরি করে। তবে এসব সেন্সর নির্ভুলভাবে কাজ করতে সক্ষম নয়। কারণ, সোজা পথে গিয়ে মোড় ঘুরে বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়া টানেলগুলো শনাক্ত করতে পারে না এই প্রযুক্তি।
র্যান্ড করপোরেশনের সামরিক বিশেষজ্ঞ স্কট স্যাভিটজ বলেছেন, প্রযুক্তিগত পাল্টা ব্যবস্থার অগ্রগতি হলেও টানেলিং একটি পক্ষের জন্য ভূপৃষ্ঠে অন্যের আধিপত্য দমাতে অত্যন্ত কার্যকর উপায় হিসেবে রয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, বিরোধী পক্ষ কখনোই পুরোপুরি জানে না, কোথায় কোথায় বা কতটি সুড়ঙ্গ আছে। তারা শুধু সেগুলোই জানে, যেগুলো খুঁজে পেয়েছে।
অস্ত্র, কমান্ড সুবিধা এবং যোদ্ধাদের লুকানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ঘনবসতিপূর্ণ গাজা উপত্যকার নিচে বিস্তৃত টানেলগুলো ব্যবহার করে আসছে হামাস। সময়ের পরিক্রমায় এসব টানেলে দেওয়া হয়েছে বিদুৎ সংযোগ, বাতাস ও আলোর ব্যবস্থাও। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব টানেলের কোনো কোনোটি ৩৫ মিটার পর্যন্ত গভীর। যেগুলো রেলপথ ও যোগাযোগ কক্ষ দিয়ে সাজানো যেতে পারে। টানেলের প্রবেশ পথ মূলত আবাসিক ভবন বা অন্যান্য সাধারণ মানুষ চলাচলের কোনো জায়গার মধ্যে থাকে।
প্রথমে এ নেটওয়ার্কের উদ্দেশ্য ছিল, গাজা উপত্যকার ছোট্ট একটি এলাকায় মিসর থেকে পণ্য ও অস্ত্র পাচার করা। কিন্তু এটিকে আন্তঃসীমান্ত অভিযানের জন্যও ব্যবহার করে আসছে হামাস।
- বিষয় :
- ভূগর্ভস্থ টানেল
- ইসরায়েল
- গাজা
- যুদ্ধ