ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

আলজাজিরার বিশ্লেষণ

হুংকার দিলেও কেন বিলম্বিত ইসরায়েলের স্থল অভিযান

হুংকার দিলেও কেন বিলম্বিত ইসরায়েলের স্থল অভিযান

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১৬:৫৩ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১৬:৫৩

ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়েছে। কিন্তু হুংকার আর প্রতিশ্রুতি দিলেও গাজায় স্থল অভিযান এখনও শুরু করেনি ইসরায়েল। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিরোধী দলকে ডেকে জাতীয় ঐক্য সরকার ও যুদ্ধ মন্ত্রিসভা গঠন করে ইসরায়েল। সেইসঙ্গে ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি রিজার্ভ সেনা অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থলযুদ্ধের প্রস্তুতিতে সময় লাগে। বাস্তবসম্মত হিসাব ছিল, ইসরায়েল হয়তো ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রস্তুত হবে। কিন্তু এই সময়েও কিছুই ঘটেনি।

হামাসের হামলার জবাব দিতে গোটা ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিমতীরে অন্তত ৫ লাখ সশস্ত্র সেনা মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু এমন কী হলো– ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক গাজা উপত্যকায় অগ্রসর হলো না? এ ব্যাপারে নানা ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তবে আসলে কী ঘটেছে তা শুধু ইসরায়েলি মন্ত্রিপরিষদ ও সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফই জানেন।  

নানা দিক পর্যালোচনা করে বলা যায়, বিলম্বের কারণ আন্তর্জাতিক কিংবা অভ্যন্তরীণ হতে পারে। থাকতে পারে বেসামরিক বা সামরিক বিবেচনার কারণও। প্রথম সম্ভাবনাটি হবে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা। যুদ্ধবিরতি হলে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের মাধ্যমে আংশিক বা সব বন্দির মুক্তি নিশ্চিত করার একটি সুযোগ হাতে রাখতে পারে ইসরায়েল। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা এখনও খুব একটা জোরালো নয়। সশস্ত্র জিম্মি উদ্ধার অভিযানে বড় ক্ষতি হতে পারে। বন্দিরা মারাও যেতে পারেন। 

ইসরায়েলের স্থল অভিযান বিলম্বের কারণ সামরিক হলে এই ইঙ্গিত আসতে পারে– তাহলে কি ইসরায়েলি বাহিনীর হাইকমান্ড ভয় পায়? তাদের বর্তমান বাহিনী কি পর্যাপ্ত নয়? আসলে এমনটা নয়। কারণ ইসরায়েল সহজেই কয়েক হাজার অতিরিক্ত প্রশিক্ষিত রিজার্ভ সেনা যুক্ত করতে পারে বাহিনীতে।    

আরেকটি বাধা হতে পারে, গাজার আশপাশে অবস্থানরত ব্রিগেডরা রক্তাক্ত নগর যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষিত নয়। বিশেষ করে হামাসের টানেলের নেটওয়ার্কে ভূগর্ভস্থ যুদ্ধের জন্য তাদের প্রশিক্ষণ নেই। তবে, এটাও কারণ হতে পারে না। কারণ জেনারেল স্টাফ জানতেন, ৭ অক্টোবরের পরে তাঁর বাহিনীকে সেই কাজের জন্য কীভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। 

ইসরায়েলি জেনারেল স্টাফের প্রধান জেনারেল হারজি হালেভি ও সহযোগীরা অবশ্যই অস্বস্তিতে আছেন। আর সীমান্তে অবস্থান করা ৫ লাখ সেনা ভীত হয়ে পড়েছেন। তারা জানেন না, তাদের কাজ কী, অথবা কখন ও কীভাবে কাজ করবেন?

সব দেশের সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যই জানেন সামরিক মনোবলের জন্য সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো অনিশ্চয়তা, সিদ্ধান্তহীনতা, অপেক্ষা করা এবং অজানা কিছু প্রত্যাশা করা। কিন্তু তার পরও কেন ইসরায়েল তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সন্দেহ শুরুর সুযোগ করে দিচ্ছে? আসলে এর সবকিছুই একদিকে নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট আর অন্যদিকে জেনারেল স্টাফ হালেভি এবং তাঁর কমান্ডারদের মধ্যে মতবিরোধের দিকে ইঙ্গিত বহন করে।

আদিকাল থেকেই সামরিক কর্মকর্তারা রাজকীয় বা বেসামরিক উচ্চতর আদেশ মান্য করেন। তারা চান আদেশে কোনো সন্দেহ, অস্পষ্টতা বা অনিশ্চয়তা থাকবে না।  

ইসরায়েলের ক্ষেত্রে জেনারেলরা চান, মন্ত্রিসভা তাদের বলুক– বাহিনী আসলে কী করবে এবং রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের মাত্রাই বা কী হবে? কিন্তু এই ধরনের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা নির্দেশনা পাচ্ছে না ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী। 



আরও পড়ুন

×