মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলেছে, ওয়াশিংটন মিয়ানমারে সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফল কিংবা মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের বিকল্প যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সব সরকারি কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের নেতাদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, শান্তি এবং উন্নয়নের প্রতি মিয়ানমারের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। সামরিক বাহিনীর তাদের পদক্ষেপ থেকে এখনই সরে আসা উচিত। খবর বিবিসির

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী মারিজ পেইনি বলেন, আমরা আইনের শাসন মেনে চলতে, আইনি প্রক্রিয়ায় চলমান দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তিতে এবং বেসামরিক সব নেতা ও অন্য যাদের বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে, সবাইকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে সামরিক বাহিনীকে আহ্বান জানাচ্ছি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবশ্যই বহাল থাকতে হবে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী সু চির বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীন ক্ষমতা গ্রহণের ব্যাপারটি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মিয়ানমারে কী হচ্ছে, তা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে আমরা খেয়াল রাখছি। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভারত সবসময়ই সমর্থন দিয়ে আসছে। আমরা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছি’।

জাপানের চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি কাসুনোবু কাটো বলেছেন, জাপান বিশ্বাস করে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষের সমস্যার সমাধান করা উচিত।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জন সিফটন বলেন, প্রথম বিষয়টি হচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা, যারা কয়েক দশক ধরে দেশটিকে শাসন করেছে, তারা কখনওই আসলে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ায়নি।

‘তারা কখনওই বেসামরিক কর্তৃপক্ষের শাসন মেনে নেয়নি। তাই আজকের ঘটনা আসলে এতদিন ধরে চলা অবস্থারই প্রকাশ মাত্র।’

ইয়াঙ্গুন ভিত্তিক ইতিহাসবিদ এবং লেখক থ্যান্ট মিয়ন্ত-ইউ বলেন, ভিন্ন ধরনের একটি ভবিষ্যতের দরজা খুলল মাত্র। আমার মনে হচ্ছে, পরবর্তীতে যা ঘটতে যাচ্ছে, তা আসলে কেউই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

সোমবার ভোরে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্ট এবং ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতাদের আটকে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। ‘নির্বাচনে জালিয়াতি’র প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

নিজেদের নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে একটি ভাষণে মিয়ানমার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ‘নির্বাচনে জালিয়াতি’র প্রতিক্রিয়ায় এ অভিযান চালানো হয়েছে। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং-এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে এবং এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হবে। এরপর সামরিক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আর কোনো উত্তর দেননি।

সেনা অভ্যুত্থানের পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নিয়েছেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ এবং সেনাপ্রধান মিন অং লাইং।

সরকার ও প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার পর এ ঘটনা ঘটল। এর আগে ১৯৬২ সালে এক অভ্যুত্থানের পর দেশটি টানা ৪৯ বছর সামরিক বাহিনীর হাতে শাসিত হয়েছে।

গত বছরের ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি নিরঙ্কুশ জয় পায়। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেখানে ৩২২টি আসনই যথেষ্ট, সেখানে এনএলডি পেয়েছে ৩৪৬টি আসন। সোমবার থেকে নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলে। তারপর থেকেই দেশটিতে আবার সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে নাটকীয়ভাবে ইন্টারনেট সংযোগ চলে গেছে। মনিটরিং সার্ভিস নেটব্লকস জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুনেও ইন্টারেনেটের গতি নেই। এছাড়া বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইয়াঙ্গুনের মোবাইল ইন্টারনেট ডাটা এবং ফোন সার্ভিসও একরকম চলে গেছে।

এদিকে ইয়াঙ্গুনের সিটি হলে অবস্থান নিয়েছেন সেনা সদস্যরা।