- আন্তর্জাতিক
- আমিরাতে ‘ভূতের গ্রাম’
আমিরাতে ‘ভূতের গ্রাম’

ছবি: সংগৃহীত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমুদ্র নিকটবর্তী একটি দ্বীপ দীর্ঘ ৫৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায় জনমানব শূন্য, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এটি স্থানীয়দের কাছে ভূতপল্লি, ভূতের গ্রাম বা জ্বীনদের বসবাসের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। দেশটির রাস আল খাইমাহ প্রদেশে অবস্থিত এই দ্বীপটির নাম আল জাজিরা আল হামরা। বাংলায় 'লাল দ্বীপ'। এখানকার বহু বছরের পুরোনো ঘরবাড়ি আর ধ্বংসস্তুপগুলোতে মিশে আছে রহস্যময় নানা ঘটনা আর গল্প।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাল দ্বীপের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস। তাদের মতে, জ্বীন-ভূতের ভয়ে লাল দ্বীপকে ১৯৬৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দ্বীপের বাসিন্দারা সবাই আবুধাবি পাড়ি দিয়েছেন। সেখানেই তারা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তবে এখনও এই দ্বীপে কোনো কোনো মালিক নিজের ঘরবাড়ি দেখতে যান। কেউ কেউ সেসব ঘরবাড়িতে কম মূল্যে ভাড়াটিয়াও রেখেছেন।
জানা যায়, ১৮৩০ সালের দিকে এই দ্বীপের অন্তত ২০০ লোক মুক্তা সংগ্রহ করত। ব্যবসায়িক সূত্রে এখানে পার্শিয়ান, পর্তুগিজ ও ব্রিটিশদের চলাচল ছিল। প্রথমে ব্রিটিশদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে স্থানীয় শাসকরা এর নাম রাখে 'জোরাত আল কামরা'। পরে জাআব গোত্রের লোকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাড়ে। তারা অন্তত ৫০০ ঘরবাড়ি নির্মাণ করে। তাদের ২৫টি মুক্তা সংগ্রহের নৌকা ছিল। তখন থেকে তারা গ্রামটিকে 'জাজিরা আল জাআব' নামে প্রচার শুরু করে। ১৯১৪ সালে দেশটির প্রাদেশিক শহর শারজাহর শাসক শেখ খালিদ বিন আহমদ আল কাসিমি ও রাস আল খাইমাহর শাসক শেখ সুলতান বিন সেলিম আল কাসেমির মধ্যে একটি চুক্তির পরে এলাকাটি রাস আল খাইমাহর অংশে পরিণত হয়। ১৯৬০ সালের দিকে এই গ্রামে জ্বীন-ভূতের বসবাসের খবর রটে যায়। বাসিন্দাদের মনে ভয়-ভীতি তৈরি হয়। এর কয়েক বছর পর দ্বীপটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বাসিন্দা আবুধাবি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, আমিরাতের প্রাদেশিক শহর রাস আল খাইমাহ থেকে রহস্যময় এই দ্বীপটির দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। আগে সামুদ্রিক মুক্তা সংগ্রহ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন এই দ্বীপের বাসিন্দারা। নৌকা নিয়ে গভীর সমুদ্র থেকে তারা মুক্তা সংগ্রহ করতেন। তবে বর্তমানে এই দ্বীপে যতটুকু চোখ যায় কেবলই ধ্বংসস্তুপ, ভাঙা ভবন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাচীন ইটপাথরে ভরা জঞ্জালময় এক ভৌতিক পরিবেশ। এক কিলোমিটারেরও কম আয়তনের ভৌতিক গ্রামটি বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসন তারকাঁটার প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছে। ভাঙা ভবনগুলোর পথ ধরে ভেতরে যেতে গা ছমছম করে ওঠে। বড় বড় সামুদ্রিক পাথরে নির্মিত শত শত ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। মানুষজন নেই বললেই চলে। চলাচলের রাস্তাগুলো জঞ্জালে ভরা। তবে উপরের পলেস্তারা খসে গেলেও পুরোনো মসজিদটি অনেকটা অক্ষত রয়েছে। আবার কয়েকটি ঘর মেরামত করে কিছু মৎসজীবী শ্রমিক বাস করছেন।
শ্রমিকরা জানান, স্থানীয়দের মধ্যে লাল দ্বীপে জ্বীন-ভূত থাকার প্রচার-প্রচারণা রয়েছে। পরিত্যক্ত গ্রামের ঘরবাড়িগুলো বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। তারকাঁটার প্রাচীরের কাছাকাছি কয়েকটি ঘর মেরামত করে তারা থাকেন। কম মূল্যের ভাড়া পরিশোধ করতে হয় তাদের। ঘরগুলোর মালিকের বংশধররা এখনও এসে খোঁজ খবর করেন।
এর আগে গ্রামটি নিয়ে ভৌতিক চলচ্চিত্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নেন কয়েকজন নির্মাতা। নির্মাতা ফয়সাল হাশমির বলেন, এই গ্রামে যারা ছিলেন কিংবা ভ্রমণে এসেছেন তাদের সঙ্গে একবার হলেও রহস্যময় ভূতুড়ে কোনো না কোনো ঘটনা ঘটেছে। কিছু কিছু মানুষ এই গ্রামে জ্বীন নেই বললেও বেশিরভাগ স্থানীয়রা এখানে জ্বীনের অস্তিত্ব আছে বলে দাবি করেন।
মন্তব্য করুন