কয়েক বছর ধরে ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তবে সম্প্রতি দেশ দুটির প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ফোনালাপ সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। 

ফোনালাপে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনার টিকা পেতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। মহামারি মোকাবিলায় অব্যাহত বৈশ্বিক সমন্বয় প্রয়োজন বলেও সম্মত হয়েছেন তারা।

কানাডাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল পোস্টে এক নিবন্ধে বিজয় সাপ্পানি লিখেছেন, দুই দেশের মধ্যে পার্থক্য যত রয়েছে তার চেয়ে বেশি রয়েছে মিল। তাই মহামারি মোকাবিলায় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কানাডার স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে ভারত কানাডার যথার্থ অংশীদার।

ট্রুডো এর আগে বলেছিলেন, বিশ্ব যদি করোনা মহামারি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়, তবে এটি ভারতের ওষুধ শিল্পের সক্ষমতার কারণে ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে হবে।

কয়েক বছর ধরে ভারত তার ওষুধ খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। এটি বিশ্বের জেনেরিক ওষুধের বৃহত্তম রপ্তানিকারী দেশ, যা বৈশ্বিক উৎপাদনের ২০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে জেনেরিক ওষুধের বাজারের ৪০ শতাংশ। একইভাবে, ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও বিশ্বে যত ভ্যাকসিন উৎপাদন হয়, তার ৬২ শতাংশ ভারতে উৎপাদন হয়।

পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে নিবন্ধে জানানো হয়, প্রায় ৭০টি নিম্ন-আয়ের দেশ কেবলমাত্র তাদের ১০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে সক্ষম হবে। কারণ, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ সমৃদ্ধ দেশগুলোতে বসবাস করলেও এই ১৪ শতাংশের জন্য বিশ্বজুড়ে সরবরাহ করা ভ্যাকসিনের ৫৩ শতাংশ ইতোমধ্যে কেনা হয়েছে। যখন উন্নত বিশ্ব ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে চলেছে, ভারত তখন বিশ্বকে বিনামূল্যে এবং স্বল্প মূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহের পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশে ভারত করোনা টিকার ৩৬ মিলিয়ন ডোজ সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে অনুদানের ভিত্তিতে ৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে। 

নিবন্ধে বিজয় সাপ্পানি লিখেছেন, কানাডার উচিত ভারতের অংশীদার হওয়া, যাতে করে ভালো সময়ের পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতিতেও দেশটি ভারতের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ওষুধ ও অন্যান্য ফার্মাসিউটিক্যালস নিতে পারে। কানাডা করদাতার অর্থ আরও ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে এবং ভারতের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে মহামারি মোকাবিলার জন্য আরও প্রস্তুতি নিতে পারে। এটি আমাদের মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য আটকে যাওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করবে এবং সঙ্কটের সময় আমরা অগ্রাধিকার পাব।

নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে করোনার টিকা সেতু হিসেবে কাজ করতে পারে। যদিও এটি মৌলিক লেনদেনের সম্পর্ক, তবুও এ সহযোগিতায় উভয় দেশ বহুগুণে সুবিধা অর্জন করতে পারবে। করোনা মহামারি দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরতে পেরেছে।