- আন্তর্জাতিক
- পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটে সংঘর্ষ, নিহত ২
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটে সংঘর্ষ, নিহত ২

সংগৃহীত ছবি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় বৃহস্পতিবার ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভোট হয়। তবে এ নির্বাচনের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রে ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম আসনটি। এ ভোট নিয়ে শুরু থেকে ছিল টান টান উত্তেজনা। ভোট গ্রহণের আগের দিন নন্দীগ্রামের সব সীমান্ত বন্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এরপরও নির্বাচনের দিন বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত দুই জন। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভের মুখে অবরুদ্ধ ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তৃণমূল নেত্রী মমতা ও বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী উভয়ই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে মমতার অবরুদ্ধ থাকার বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, দিদি (মমতা) হার মেনে নিয়েছেন।
ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার সকালে নন্দীগ্রামের বয়াল-২ এলাকায় তৃণমূল ও বিজেপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে ৭ নম্বর কেন্দ্রেও সহিংসতা হয়। দুপুরে সেখানে মমতা পৌঁছালে তাকে কাছে পেয়ে তৃণমূল কর্মীরা অভিযোগ জানান। তারা বলেন, বিজেপির কর্মীরা তাদের ভোট দিতে বাধা দিচ্ছে। এ নিয়ে সে সময় ফের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে মমতাকে বুথের ভেতর নেওয়া হয়। এ সময় বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন মমতা। তিনি সেখানে বসেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে ফোন করেন। মমতা বলেন, 'ওরা লোকজনকে ভোট দিতে বাধা দিচ্ছে। আমি সকাল থেকে খবর পাচ্ছি। এখন আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি, বিষয়টা দেখুন।' এ সময় তাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আশ্বাস দেন রাজ্যপাল।
শেষে বিপুল পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে তাকে বাইরে বের করে আনে। এরপরই সাংবাদিক বৈঠকে মমতা দাবি করেন, 'আমি আমার জেতা নিয়ে চিন্তিত নই। আমি মা-মাটি-মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে নন্দীগ্রামে জিতবই, কিন্তু আমি গণতন্ত্র নিয়ে চিন্তিত।'
বিক্ষোভমুক্ত হয়ে তিনি নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থীর কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, 'এখানে যে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন, তিনি বুধবার রাত থেকেই সন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছেন এলাকায়। এখানে ভোটে চিটিংবাজি হয়েছে।'
বয়ালের ওই বুথে যখন মমতাকে ঘিরে বিজেপির কর্মীরা বিক্ষোভ দেখায়, সে সময়ই শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, 'খেলা যা হওয়ার, হয়ে গেছে। ওই বুথে ৮০ শতাংশ ভোটই হয়ে গেছে। এখন গিয়ে আর কিচ্ছু করার নেই।' কিন্তু মমতা সেই প্রসঙ্গ তুলেই অভিযোগ করেন, 'বিহার ও উত্তরপ্রদেশের গুন্ডারা এসে ঝামেলা পাকাচ্ছে। যারা ঝামেলা করছে, একজনও বাংলা জানে না। সব হিন্দি বলছে।'
তবে শুধু নন্দীগ্রাম নয়, আশপাশের সব আসনেই তৃণমূলের ফল ভালো হবে বলেও এদিন দাবি করেন মমতা। এদিন সকাল থেকেই নন্দীগ্রামের বুথে-বুথে ঘুরে বেড়িয়েছেন শুভেন্দু। এদিন তার গাড়িবহরে তৃণমূল কর্মীরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এদিন মমতা বের হন দুপুর ১টার পর। আর প্রথম বুথ বয়ালে গিয়েই বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তবে শুভেন্দুর মুখে হাসির পরও মমতার ৯০ শতাংশ ভোট পাওয়ার দাবি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা আসনে সকাল থেকেই দফায় দফায় বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ। তৃণমূল প্রার্থী হুমায়ুন কবীরের অভিযোগ, তাকেই বুথে ঢুকতে বাধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ডেবরার অন্তর্গত একটি বুথে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ পেয়ে বিজেপির এক মণ্ডল সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান ভারতী ঘোষ। সেই সময়ই বিজেপি প্রার্থী বহিরাগতকে নিয়ে বুথে ঢুকেছে অভিযোগ করে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়। বুথের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন দুই দলের সদস্যরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠে নামে পুলিশ। সেখান থেকে ভারতী ঘোষ-ঘনিষ্ঠ বিজেপির এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অপর দিকে, কেশপুরের গুনহারা গ্রামের একাধিক কেন্দ্রে জালিয়াতি হচ্ছে খবর পেয়ে ওই এলাকায় যান বিজেপি প্রার্থী প্রীতিশরঞ্জন কুঁয়াড়। তিনি অভিযোগ করেন, তার ওপর হামলা করা হয়েছে। সেখানে সংবাদমাধ্যমের গাড়িতেও হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে সকাল থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর এলাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে দেখেন তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা সোহম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বুথের কাছাকাছি যেতেই অভিনেতার উদ্দেশে 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান দিতে থাকেন বিজেপি সমর্থকরা। সে সময় বিজেপি ও তৃণমূলের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
বাঁকুড়া আসনের তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী সায়ন্তিকা সকালে রামপুরের কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। সেখানে একটি কেন্দ্রে বেশ কিছুক্ষণ ইভিএম খারাপ থাকায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন তিনি। ভোটকেন্দ্রে ঘুরে বেড়িয়েছেন খড়গপুরের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়ও। বাংলার মানুষ উন্নয়ন চান বলেই সকাল থেকে সকলে এসে ভোট দিচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।
দিদি হার মেনে নিয়েছেন- দাবি মোদির : মমতা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্রভাবে কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি দাবি করেন, নন্দীগ্রামের ঘটনাই প্রমাণ করে যে মমতা হার মেনে নিয়েছেন। এ দিন হাওড়ার উলুবেড়িয়ার সভায় মোদি বলেন, 'কিছুক্ষণ আগে নন্দীগ্রামে যা হলো আমরা সবাই দেখেছি। এতেই প্রমাণিত, দিদি হার মেনে নিয়েছেন। এটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, বাংলায় বিজেপির সরকার তৈরি হতে চলেছে।'
মমতাকে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, 'বাংলার মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন যে দিদিকে বিদায় জানাতে হবে। নন্দীগ্রামের মানুষ এ দিন সেই স্বপ্নটাই পূরণ করলেন।'
মন্তব্য করুন