- আন্তর্জাতিক
- আমাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে: ভিডিওতে জর্ডানের সাবেক যুবরাজ
আমাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে: ভিডিওতে জর্ডানের সাবেক যুবরাজ

প্রিন্স হামজা বিন হুসেইন। ছবি: গেটি ইমেজেস
জর্ডানের সাবেক যুবরাজ প্রিন্স হামজা বিন হুসেইন এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি ও তার পরিবারকে আম্মানের বাইরে আল-সালাম প্রাসাদে গৃহবন্দি করা হয়েছে। তার যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। তার সব কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রিন্স হামজা জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সৎভাই। সম্প্রতি জর্ডানে উচ্চপর্যায়ের বেশ কিছু লোককে গ্রেপ্তার করা হয়- যা একটি কথিত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার অংশ বলে অভিযোগ আছে।
শনিবার রেকর্ড করা ভিডিওটিতে প্রিন্স হামজা বলেন, জর্ডানের সেনা প্রধান তাকে জানিয়েছেন যে তিনি বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না। লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। কারণ তিনি উপস্থিত ছিলেন এমন কিছু সভায় সরকার ও বাদশাহর সমালোচনা করা হয়েছে।
তবে তিনি নিজে এরকম সমালোচনা করেছেন এমন কোনো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়নি। এটি দেশের বর্তমান নেতাদের সমালোচকদের ওপর এক ক্র্যাকডাউনের অংশ বলেও ভিডিওতে উল্লেখ করেন সাবেক এ যুবরাজ। খবর বিবিসির।
প্রিন্স হামজা বলেন, গত ১৫-২০ বছরে জর্ডানের প্রশাসন যেভাবে ভেঙে পড়েছে, সরকার কাঠামোয় যে অদক্ষতা ও দুর্নীতি দেখা গেছে সেজন্য তিনি দায়ী নন।
তিনি বলেন, 'পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে কেউ কথা বলতে পারে না, নিগ্রহ-হুমকি-হয়রানি-গ্রেফতার শিকার না হয়ে কেউ কোনো মত প্রকাশ করতে পারে না।'
ভিডিওতে তিনি বলেন, দেশে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই গোপন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবার আতংকে থাকতে হয়।
প্রিন্স হামজার আইনজীবীর মাধ্যমে বিবিসির কাছে পাঠানো এক ভিডিওতে তিনি তার দেশের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অদক্ষতা ও হয়রানির অভিযোগ আনেন।
এর আগে জর্ডানের সামরিক বাহিনী প্রিন্স হামজাকে গৃহবন্দি করার কথা অস্বীকার করেছিল। তবে তারা বলেছে, জর্ডানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ণ হতে পারে এমন কিছু কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য প্রিন্স হামজাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি প্রিন্স হামজা কিছু উপজাতীয় নেতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন- যাদের মধ্যে থেকে তিনি কিছু সমর্থন পেয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রিন্স অবশ্য কোনো রকম অন্যায় করার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন না।
এর মধ্যে মিশর ও সৌদি আরবের মতো আরব বিশ্বের আঞ্চলিক শক্তিগুলো বাদশাহ আবদুল্লাহর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জর্ডানের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র বাদশাহ আবদুল্লাহকে একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে তার প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছে।
জর্ডানের একজন সাংবাদিক রানা সোয়েইস বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই রাজপরিবারের ভেতরে উত্তেজনা চলছিল। বিবিসির বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার বলছেন, মনে হচ্ছে রাজপরিবারের এই সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
শনিবার জর্ডানে আরও গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসেম আওয়াদাল্লাহ এবং রাজপরিবারের একজন সদস্য শরিফ হাসান বিন জায়েদ।
প্রিন্স হামজা হচ্ছেন প্রয়াত বাদশাহ হুসেইন ও তার প্রিয় স্ত্রী রানি নূরের সর্বজ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি ব্রিটেনের হ্যারো স্কুল ও স্যান্ডহার্স্টের মিলিটারি একাডেমির গ্রাজুয়েট, এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। কাজ করেছেন জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনীতে।
তিনি বাদশাহ হুসেইনের প্রিয় পুত্র ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তাকেই জর্ডানের যুবরাজ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বাদশাহ হুসেইনের মৃত্যুর পর তাকে উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা করা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, তার বয়স অনেক কম এবং তিনি অনভিজ্ঞ। ফলে তার পরিবর্তে তার সৎভাই আবদুল্লাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ২০০৪ সালে প্রিন্স হামজার যুবরাজ খেতাব বাতিল করেন।
মন্তব্য করুন