করোনাভাইরাসে বেসামাল ভারতে এক সপ্তাহের মধ্যে পঞ্চমবারের মতো এক দিনে চার লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। পাশাপাশি টানা দ্বিতীয় দিনের মতো চার হাজারের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে কভিডে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমানে বাজারে প্রচলিত করোনা টিকাগুলো ভারতের নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অকার্যকর প্রমাণিত হতে পারে। খবর এএফপি ও এনডিটিভির।
গতকাল রোববার সকালে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় সেখানে চার লাখ তিন হাজার ৭৩৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং একই সময় ৪০৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ভারতে সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ সংক্রমণ ও মৃত্যুর জন্য দায়ী ভাইরাসের নতুন ধরন বি.১.৬১৭। এটি প্রচলিত ভাইরাসের তুলনায় অনেক শক্তিশালী বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথানের শঙ্কা, বর্তমানে বাজারে প্রচলিত করোনার টিকাগুলো অকার্যকর প্রমাণিত হতে পারে এই ধরনটির বিরুদ্ধে।
এ কারণে ভারতে বর্তমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গণটিকাদান কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন স্বামীনাথান। অর্থাৎ, সচেতন থাকতে হবে যাতে এই ভাইরাসটি ছড়াতে না পারে। কেবল টিকার ওপরে নির্ভর করলে চলবে না। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সল্ফপ্রতি বি.১.৬১৭ ধরনটিকে 'উদ্বেগজনক ধরন' হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
করোনা বায়ুবাহিত-সিডিসি :করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত বলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। শুক্রবার করোনাভাইরাস সংক্রান্ত হালনাগাদ গাইডলাইনে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।
সিডিসি জানিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ছয় ফুটেরও বেশি দূরে থাকা লোকজনও বায়ুবাহিত করোনাভাইরাসের মাধ্যমে
সংক্রমিত হতে পারেন। বিশেষত, হাঁচি, কাশির সময়ে যে সূক্ষ্ণ ড্রপলেট ও অ্যারোসল উড়ে আসে, তার মাধ্যমে হতে পারে সংক্রমণ। নাক, মুখ এমনকি চোখের মাধ্যমেও তা শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
জর্জ ওয়াশিংটন স্কুল অব পাবলিক হেলথের এপিডেমোলজিস্ট ডেভিড মাইকেলস বলেন, এতদিন সবাই ড্রপলেটের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ নিয়ে বেশি আলোচনা করেছেন। কিন্তু বায়ুবাহিত অ্যারোসলের মাধ্যমে যেভাবে সংক্রমণ ঘটে, সে বিষয়ে সে রকম আলোচনা বা সতর্কতা নেওয়া হয়নি। হাঁচি বা কাশির পর সূক্ষ্ণ অ্যারোসলের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বাতাসে ভেসে থাকতে পারে করোনাভাইরাস।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের গবেষক ডোনাল্ড মিল্টনের মতে, ভাসমান করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য আরও ভালো উপায় প্রয়োজন। তিনি বলেন, সার্জিক্যাল মাস্ক পরলেও সেটি কখনোই সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেয় না। গাল-নাকের ফাঁক দিয়ে সহজেই বাতাসে ভাসমান ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।'
এ থেকে সুরক্ষা পেতে কিছু সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন দুটি মাস্ক পরা যেতে পারে। একটি সার্জিক্যাল মাস্কের ওপর একটি কাপড়ের মাস্ক। মাস্কের ফাঁক দিয়ে যাতে বাতাস প্রবেশ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাস্কে বারবার হাত দেওয়া চলবে না। মাস্ক যাতে সম্পূর্ণ ফিট হয় এবং খুলে না আসে তা নিশ্চিত করতে হবে। বড় চশমা ও ফেসশিল্ড পরা যেতে পারে। এতে সামান্য হলেও চোখের মাধ্যমে সংক্রমণের আশঙ্কা কমানো যেতে পারে। এছাড়া বারবার হাত ধোয়ার মতো অভ্যাসগুলোও ধরে রাখতে হবে।
করোনায় মৃত্যু প্রায় ৩৩ লাখ :গতকাল ওয়ার্ল্ডওমিটারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সারাবিশ্বে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১২ হাজার ৮৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন সাত লাখ ৮২ হাজার ১৩৯ জন। বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ কোটি ৮৪ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩২ লাখ ৯৯ হাজারের বেশি মানুষ।


বিষয় : করোনা চিত্র

মন্তব্য করুন