- আন্তর্জাতিক
- ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন: যেভাবে হামলার ছক
বিশ্লেষণ
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন: যেভাবে হামলার ছক

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সংঘাতের ইতিহাস বহু পুরোনো। মধ্যে কয়েক বছর বড় ধরনের সংঘাত হয়নি। তবে মাঝেমধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পরে থেমে যায় যুদ্ধ পরিস্থিতি। তবে গত সপ্তাহ থেকে হঠাৎ উত্তেজনা চরমে ওঠে। দফায় দফায় ফিলিস্তিনে চালানো হচ্ছে বিমান হামলা। গাজা থেকেও ছোড়া হচ্ছে রকেট। তবে কেন হঠাৎ করে এই যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলো তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন গার্ডিয়ান ও নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকরা। তারা বলছেন, গত মাসে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে অভিযান, ইসরায়েলি আদালতের এক রায়ের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ এবং রমজানে ওই মসজিদে নামাজরতদের ওপর হামলার কারণে মূলত এই সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রতিনিধি প্যাট্রিক কিংসলে বলেছেন, ফিলিস্তিনে চলমান সংঘর্ষের কারণ খুঁজতে যেতে হবে প্রায় এক মাস পেছনে। রমজানের প্রথম রাতে আল-আকসা মসজিদে ঢুকে লাউড স্পিকারের তার কেটে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। ওই দিন ছিল ইসরায়েলের মেমোরিয়াল ডে। মসজিদের কাছাকাছি ওয়েস্টার্ন ওয়ালে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের আশঙ্কা ছিল, আজানের কারণে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই তার কেটে দেয় তারা। জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ একরিমা সাবরির মতে, সপ্তাহব্যাপী চলমান সংঘর্ষের সূত্রপাত এই ঘটনা থেকেই। আগুনে ঘি ঢেলেছিল আল-আকসা মসজিদে পুলিশের এই অভিযান। তিনি বলেন, 'মসজিদে ইসরায়েলি পুলিশের ওই অভিযানের কারণেই পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়ে যায়।'
হয়তো ঘটনা এখানেই থেমে যেতে পারত। তবে গত মাসে বেশ কয়েকটি অপ্রত্যাশিত ঘটনায় পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়। আল-আকসা মসজিদে পুলিশের অভিযানের এক সপ্তাহ পর ২১ এপ্রিল ইহুদিদের উগ্রবাদী দল লেহাভার কয়েকশ সদস্য জেরুজালেমে বিক্ষোভ মিছিল করে। সে সময় তারা রাস্তায় হেঁটে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালায়। ফিলিস্তিনিদের ঘরে ইসরায়েলের একটি দলের হামলার ছবিও দেখা যায়। ফিলিস্তিনি গাড়িচালকদের ওপরেও অনেকে হামলা চালায়।
বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা জেরেমি বোওয়েন বলেছেন, 'রমজানে পুলিশের বাড়াবাড়ি এবং আদালতের মাধ্যমে কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে উৎখাতের বিতর্কিত একটি তৎপরতা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন দফার এই বিরোধ।'
পূর্ব জেরুজালেমের আরব অধ্যুষিত এলাকা শেখ জারাহ থেকে চারটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে বাড়িছাড়া করার এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কার্যত তাদের অবৈভভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এরই মধ্যে রোজার শুরুতে পুলিশ জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের ওপর কিছু বিধিনিষেধ বসালে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। এরপর গত সপ্তাহে আল-আকসায় নামাজরতদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে আরও সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
কেবল আল-আকসা মসজিদে পুলিশের অভিযানের কারণেই নয়, তরুণ ফিলিস্তিনিদের জাতীয় পরিচয় নিয়ে এক ধরনের ক্ষোভ রয়েছে। এ ছাড়া জেরুজালেমের অন্যতম প্রবেশদ্বার দামেস্ক গেটের কাছে পপুলার প্লাজা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুলিশ। সে সময়ে পুলিশের মুখপাত্র মিকি রোজেনফিল্ড বলেন, সহিংসতার আশঙ্কায় ওই প্লাজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বাস্তবে ফিলিস্তিনিদের কাছে এটি ছিল অসম্মানজনক। এ ঘটনায় তাদের মনে ক্ষোভ জন্মায়। পূর্ব জেরুজালেমে বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি বাসিন্দা নিজেদের পছন্দে ইসরায়েলের নাগরিক নন। ১৯৬৭ সাল থেকেই জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের অনেকেই বলছেন, তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন, তবে তা মেলেনি। তারা ভোটও দিতে পারেন না। অনেকেই আশঙ্কা করেন, তাদের জোর করে জেরুজালেম থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা চলছে। বাড়ি নির্মাণে তাদের ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। এসব বিধিনিষেধের কারণে তারা শহর ছাড়তে অথবা অবৈধভাবে বসবাস করতে বাধ্য হন।
ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অর্গানাইজেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইসরায়েলি পার্লামেন্টের সাবেক স্পিকার আব্রাহাম বার্গ বলেন, গাজায় বছরের পর বছর ধরে চলা অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা, পশ্চিমতীর দখল করে রাখা ও আরবদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের পরিণতিতেই এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
মন্তব্য করুন