- আন্তর্জাতিক
- করোনার নতুন ধরন 'ডেল্টা প্লাস' কতোটা ভয়ঙ্কর
করোনার নতুন ধরন 'ডেল্টা প্লাস' কতোটা ভয়ঙ্কর

গবেষকরা বলছেন করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন যেটিকে এতদিন 'ডেল্টা' ধরন বলা হচ্ছিল দ্বিতীয় দফায় পরিবর্তিত হয়েছে। ইউরোপে প্রথমবার শনাক্ত হওয়া এই ধরনকে 'ডেল্টা প্লাস' হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
কয়েকটি গবেষণার তথ্য উদ্ধৃত করে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তথাকথিত 'ডেল্টা প্লাস' ধরন আগের ধরনগুলোর চেয়ে সহজে ছড়ায়, ফুসফুসের কোষের সাথে অপেক্ষাকৃত সহজে যুক্ত হয় এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহৃত টিকা যে মূলনীতি অনুসারে তৈরি করা হয় 'মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি' তার বিরুদ্ধে কার্যকর। খবর বিবিসি বাংলার
নতুন এই ধরনটি ভারতে শনাক্ত হওয়া 'ডেল্টা' ধরনের সাথে সম্পর্কিত। ভারতে দ্বিতীয় দফা করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পেছনে মূল কারণ মনে করা হয় ডেল্টা ধরনকে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ভারতে প্রথমবার ডেল্টা প্লাস ধরন পাওয়া যায় এ বছরের এপ্রিল মাসে। তিনটি অঙ্গরাজ্যের ৬টি জেলায় এই ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
ভারত ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন সহ ৯টি দেশে এই ডেল্টা প্লাস ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ডেল্টা ধরন এরই মধ্যে বিশ্বের ৮০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভাইরাস সাধারণত সবসময়ই পরিবর্তিত হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাস পরিবর্তিত হয়ে দুর্বল হয়ে যায়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তিত ভাইরাস পুরনো ভাইরাসের চেয়ে শক্তিশালী ও বেশি সংক্রামক হয়ে দেখা দেয়, যেই পরিবর্তিত রূপটি অন্য ধরনগুলোর তুলনায় বেশি মারাত্মক অসুস্থতা তৈরি করে।
ডেল্টা প্লাস ধরনটিতে 'কে৪১৭এন' নামে একটি অতিরিক্ত মিউটেশন রয়েছে, যেটি দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে শনাক্ত হওয়া বেটা ও গামা ভ্যারিয়ান্টেও পাওয়া গেছে।
তবে নতুন এই ডেল্টা প্লাস ধরনকে এখনই 'উদ্বেগের কারণ' হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।
'ডেল্টা'র মত করোনাভাইরাসের ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়ান্টও কোভিড ভ্যাকসিন নেয়ার পর বা অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার পরও সংক্রমণ তৈরি করতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
শীর্ষস্থানীয় ভাইরোলজিস্টদের অনেকেই এটিকে এখনই দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে মানতে রাজি নন।
তারা মনে করেন, এই ধরন যে আগের ধরনের চেয়ে বেশি সংক্রামক বা এর ফলে আরো গুরুতর অসুস্থতা তৈরি হতে পারে-এমন দাবির পক্ষে এখনও যথেষ্ট তথ্য নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিভাগের ভাইরোলজিস্ট জেরেমি কামিল বলেন, 'ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের চেয়ে নতুন ডেল্টা প্লাস বেশি মারাত্মক, এরকম চিন্তা করার কোনো কারণ এখনো নেই।'
অন্যদিকে অনেক বিশেষজ্ঞই ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়ান্টকে হালকাভাবে নেয়ার পক্ষপাতী নন।
দিল্লির ইনস্টিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলোজির পরিচালক ডা. অনুরাগ আগারওয়াল বলেন, 'ডেল্টা ধরন থেকে তৈরি হওয়া সব ধরনই দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেল্টা ধরনের অন্যতম প্রধান উপসর্গ মাথা ব্যাথা। এর পাশাপাশি গলা ব্যাথা, সর্দি এবং জ্বরও থাকতে পারে।
তবে এই ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্ত হলে স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। পাশাপাশি কাশি হওয়ার সম্ভাবনাও বেশ কম।
যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞদের হিসেব অনুযায়ী, পূর্ববর্তী ধরনগুলোর চেয়ে ডেল্টা ধরন অন্তত ৬০ শতাংশ বেশি সংক্রামক।
এছাড়া পূর্ববর্তী ধরনে আক্রান্তদের তুলনায় ডেল্টা ধরন আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ।
মন্তব্য করুন