- আন্তর্জাতিক
- অব্যাহত বিক্ষোভের মুখে তালেবান, স্বীকৃতি না দেওয়ার আহ্বান
অব্যাহত বিক্ষোভের মুখে তালেবান, স্বীকৃতি না দেওয়ার আহ্বান

আফগানিস্তানে নারীদের বিক্ষোভ, ছবি: গেটি ইমেজেস
তালেবানের ভয়ভীতি, হামলা ও নির্যাতনের পরও রাজপথ ছাড়ছেন না আফগানরা। শিক্ষা, স্বাধীনতা ও অধিকারের দাবিতে রাজধানী কাবুলসহ বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় বিক্ষোভ করছেন তারা। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই নারী। বুধবার কাবুল, হেরাত, ফয়জাবাদসহ কয়েকটি শহরেও প্রতিবাদী মিছিল হয়েছে। এ নিয়ে পাঁচ দিন ধরে রাস্তায় প্রতিবাদ করছেন তারা। এদিকে, অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া তালেবান তাদের মন্ত্রিসভায় কোনো নারীকে না রাখায় ক্ষোভ বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে তালেবান সরকারকে অব্যাহত বিক্ষোভ মোকাবিলা করে সামনে এগোতে হবে; ধারণা পর্যবেক্ষকদের। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, বুধবার কাবুল ও ফয়জাবাদে বিক্ষোভ করেছেন আফগানরা। পরে সশস্ত্র তালেবান নিরাপত্তাকর্মীরা সেখানে পৌঁছানোর পর মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এর আগের দিন কাবুল ও হেরাতে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়েন তালেবান যোদ্ধারা।
এ সময় এক নারী তাদের দিকে তাক করা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে অনর্গল বলে যান তালেবান শাসনামল নিয়ে তার আপত্তি আর ভবিষ্যৎ দুশ্চিন্তার কথা। তিনি বলেন, 'এরা (তালেবান) খুব খারাপ, তারা মানুষই নয়। আমাদের বিক্ষোভের অধিকারটুকুও দিচ্ছে না। তারা মুসলিম তো নয়ই, তারা কাফের।'
এএফপি বলছে, মঙ্গলবার হেরাতে গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এ বিক্ষোভ গত শনিবার প্রথম শুরু হয়। এরপর থেকে বিক্ষোভের আকার বড় হচ্ছে। মঙ্গলবারের মিছিলের আয়োজক যারা বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তারা বলেছিলেন যে তারা ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু চুপ না থেকে এখন যে কথা বলতে হবে, সে বিষয়ে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে তালেবান সরকারে কোনো নারী স্থান না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বহু আফগান ও বিদেশি বিশ্নেষক।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তালেবান কাবুল দখলের পর মাস পার হতে চললেও এ ধরনের বিক্ষোভ, প্রতিদিন নারীদের নেতৃত্বে ছোট ছোট নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি সদ্য ঘোষিত সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়েই হাজির হচ্ছে।
তালেবান অবশ্য আফগানদের খানিকটা ধৈর্য ধরতে বলেছিল; জনগণের দাবি-দাওয়ার দিকে নজর দিতে সরকার গঠন পর্যন্ত সময়ও চেয়েছিল তারা। তালেবানের এক মুখপাত্র নারীদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বলেন, 'তাদের কিছু সময় ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে। যখন সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সংগঠনগুলো কাজ করা শুরু করবে, তখন তারা আপনাদের কাছে যাবে।'
তালেবানের আগের শাসনামলে (১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত) নারীদের জন্য বাইরে চাকরি ও শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। সে সময়ে নিয়ম ভঙ্গকারীকে বেত্রাঘাত এবং জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো। এবার তালেবান আগের তুলনায় অনেক উদার হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই প্রতিশ্রুতির দিকে বহু আফগান ও বিদেশি দাতার কড়া নজরও রয়েছে। তবে সরকার ঘোষণার পর অনেকেই আশাহত হয়েছেন। তারা বলছেন, আগের তালেবানের সঙ্গে বর্তমান তালেবানের কোনো পার্থক্য নেই।
দেশটিতে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণার পরদিনই ওই সরকারকে স্বীকৃতি না দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে তালেবানবিরোধী মিলিশিয়াদের সংগঠন এনআরএফএ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লং ওয়ার জার্নালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক টুইট বার্তায় বলেন, 'নতুন তালেবান আর পুরোনো তালেবান একই।'
উডরো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলারসের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুজেলম্যান বলেন, 'এটা আদৌ অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার নয়। যাই হোক, এতে অবাক হওয়ার মতো কিছুই নেই।'
পাঁচ সাংবাদিক গ্রেপ্তার:
কাবুলভিত্তিক দৈনিক পত্রিকা ইটিলাট্রোজের পাঁচ সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে তালেবান সরকার। বুধবার দৈনিকটির প্রধান সম্পাদক জাকি দারিয়াবি এই তথ্য জানিয়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে দেশটির টোলো নিউজ এক টুইট বার্তায় গ্রেপ্তার পাঁচ সাংবাদিকের ছবি প্রকাশ করেছে। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি।
মন্তব্য করুন