মেক্সিকোর এক সিরিয়াল নারী খুনি আট বছরে অন্তত ১১ জন বৃদ্ধাকে খুন করার দায়ে দোষী প্রমাণিত হয়েছিলেন। তার সাজা হয়েছিল ৭৫৯ বছরের কারাদণ্ড। বলা হয় আরও বহু খুন করেছিলেন তিনি, যেগুলো আদালতে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।

হুয়ানা বারায্যা নামে এই সিরিয়াল খুনি ছিলেন মেক্সিকোর একজন পেশাদার নারী কুস্তিগীর। খবর বিবিসির

মেক্সিকো সিটির উত্তরের এক গ্রামে জন্ম হয় হুয়ানার। তার পছন্দ ছিল লুৎজা লিব্রে নামে এক জনপ্রিয় ধারার কুস্তি- যেখানে কুস্তিগীররা লড়াই করেন মুখোশে মুখ ঢেকে। 

মেক্সিকো সিটির এক আদালতে ২০০৮ সালে ১১ জন বৃদ্ধাকে খুন করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন হুয়ানা।কৌঁসুলিরা তার বিরুদ্ধে ৪০টির বেশি খুনের অভিযোগে মামলা করেছিলেন, কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে ১১টির বেশি মামলায় তারা তাকে দোষী প্রমাণ করতে পারেননি। ৬৩ বছর বয়সী হুয়ানা বারায্যা আমৃত্যু জেল খাটছেন মেক্সিকো সিটির কারাগারে।

মেক্সিকো সিটিতে ২০০৫ সালে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে একের পর এক খুনের ঘটনা। রাজধানীতে খুন হতে থাকেন বয়স্ক নারীরা। নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। খুনের ঘটনাগুলো ঘটছিল সাত বছর ধরে। প্রত্যেক নারীকে তাদের বাসায় একই কায়দায় খুন করা হচ্ছিল।

সবগুলো খুনের একটা প্যাটার্ন ছিল। সবাই বয়স্ক নারী। সবাই থাকতেন একা। সবাইকে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে খুন করা হয়। 

২০০৬ সালের জানুয়ারিতে একটি বাড়িতে ৮২ বছরের এক বৃদ্ধাকে গলায় স্টেথিস্কোপ জড়িয়ে খুন করে পালানোর সময় ধরা পড়েন সন্দেহভাজন একজন। জানা যায়, ওই সন্দেহভাজন সাবেক কুস্তিগীর হুয়ানা বারায্যা।

মেক্সিকোর নিউরো সাইকোলজিস্ট ফেগি অস্ট্রস্কি জেলে হুয়ানা বারায্যার সঙ্গে দেখা করতে যান। তিনি বলেন, এটা ঠিক সাইকোপ্যাথদের মনস্তত্ত্ব। তারা জানে কোনটা অপরাধ। কিন্তু তারপরেও তারা অনায়াসে সেই অপরাধ করে- অপরাধ বোধ তাদের থাকে না।

হুয়ানা বারায্যা আরও দুটি খুনের কথা স্বীকার করেছিলেন, যদিও পরে সেই স্বীকারোক্তি তিনি ফিরিয়ে নেন।

ড. অস্ট্রস্কি বলেন, হুয়ানা জেলখানায় বসে যখন তার পরিবারের কথা বলেছেন তখন তার মধ্যে কোনো আবেগ ছিল না। তার গলার স্বর ছিল একেবারে ঠাণ্ডা। হুয়ানা কিছুটা হাসতে হাসতে তার পরিবারের কথা বলছিলেন। তিনি বলেছিলেন তার মদ্যপ মা কীভাবে তাকে নির্যাতন করতেন, কীভাবে মদের বিনিময়ে তাকে একজন পুরুষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ওই পুরুষ তাকে অন্তঃসত্তা করেছিল।

হুয়ানা বারায্যার বয়স তখন ছিল মাত্র ১৩। অন্তঃসত্তা হওয়ার পর তাকে মায়ের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল ওই পুরুষ। নিজের সন্তানের পাশপাশি ভাইবোনেদেরও দেখাশোনা করতে হতো তাকে।

ড. অস্ট্রস্কিকে হুয়ানা বারায্যা বলেছিলেন, আমি মাকে ঘৃণা করতাম। আমার মা ছিলেন জঘন্য। 

ড. অস্ট্রস্কি তার রিপোর্টে লিখেছিলেন, মায়ের হাতে ছোটবেলায় যে নির্যাতনের শিকার হন হুয়ানা বারায্যা, সেটাই তাকে পরিণত বয়সে সম্ভবত নারীঘাতক করে তুলেছিল।

তিনি আরও দেখেছিলেন হুয়ানার মস্তিষ্কের সামনের প্রকোষ্ঠটি ছিল মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশের থেকে বেশি সক্রিয়, যেটা তার সহিংস আচরণের সম্ভাব্য একটা কারণ হতে পারে বলে ড. অস্ট্রস্কির ধারণা।

ড. অস্ট্রস্কি বুঝতে চেয়েছিলেন একের পর ঠাণ্ডা মাথায় এতগুলো খুন করার পেছনে মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

ড. অস্ট্রস্কি বলেন, আসলে এর সঙ্গে একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া জড়িত থাকে। এটা রাতারাতি হঠাৎ করে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত নয়। কীভাবে সে বড় হয়েছে সেটা আমি বুঝতে চেয়েছিলাম। হিংসাত্মক আচরণের পেছনে অনেক রকম কারণ থাকে। অবশ্য কারোর মস্তিষ্কের গঠনেও অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে, যেটা জানা গেলে তার চিকিৎসা করা সম্ভব।

তিনি বলেন, যারা ছোটবেলায় নির্যাতন আর অত্যাচারের আবহের মধ্যে দিয়ে বড় হয়ে ওঠে, ওইসব ঘটনা তাদের মানসিক গঠনকে অবশ্যই প্রভাবিত করে। খুনিকে শুধু জেলে ভরে দিলেই তো অপরাধ বন্ধ হবে না। সমাজে অপরাধ ঠেকাতে হলে অপরাধীর মনকে বুঝতে হবে। সেটাই আমি করেছিলাম।