- আন্তর্জাতিক
- 'যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ চীন'
ম্যাককিনসির গবেষণা প্রতিবেদন
'যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ চীন'

বিশ্বে সবচেয়ে ধনী দেশ এখন চীন। সম্পদের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রকেও পেছনে ফেলেছে দেশটি। ২০২০ সালে চীনের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২০ ট্রিলিয়ন ডলার। দুই দশক আগে অর্থাৎ ২০০০ সালের দিকেও যা ছিল ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো। অন্যদিকে একই সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৯০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসি অ্যান্ড কোম্পানির এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার তাদের 'দি রাইজ অ্যান্ড দ্য রাইজ অব দ্য গ্লোবাল ব্যালান্স শিট' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, গত দুই দশকে বিশ্বে নিট সম্পদের পরিমাণ তিন গুণ হয়েছে। ২০০০ সালে বিশ্বে নিট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫৬ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি ২০২০ সালে বেড়ে হয়েছে ৫১০ ট্রিলিয়ন ডলার। বেড়ে যাওয়া এই সম্পদের এক-তৃতীয়াংশই এসেছে চীন থেকে।
তবে গবেষণায় সম্পদের যে হিসাব করা হয়েছে, সেটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ভিত্তিতে নয়। মূলত করপোরেট জগতের ফাইন্যান্সিয়াল ব্যালান্স শিট বা আর্থিক স্থিতিপত্রের মতো করে জাতীয় সম্পদের হিসাব ও বিশ্নেষণ তৈরি করেছে ম্যাককিনসি অ্যান্ড কোম্পানির গবেষণা বিভাগ। জাতীয় স্থিতিপত্রে চারটি খাতের সম্পদের হিসাব আনা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- পরিবার, সরকার, করপোরেশন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের সব প্রতিষ্ঠান। জিডিপির হিসাবে এখনও চীনের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ম্যাককিনসির গবেষণায় বিশ্বের ৬০ শতাংশ জিডিপি থাকা ১০টি দেশের সম্পদের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া এ তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো হচ্ছে- জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, মেক্সিকো ও সুইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ জানায়, এক সাক্ষাৎকারে জুরিখের ম্যাককিনসি গ্লোবাল ইনস্টিটিটের পার্টনার জেন মিশকে বলেছেন, ' আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় আমরা এখন বেশি সম্পদশালী।' তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই দশকে উন্নত অনেক দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ততটা না বাড়লেও সম্পদ বেড়েছে অনেক। আর এই সম্পদ বাড়ার পেছনে বড় ভূমিকাটি রেখেছে রিয়েল এস্টেট বা আবাসন খাত।
সম্পদ বৈষম্য ও আর্থিক ঝুঁকি: গত দুই দশকে বিশ্বের সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে প্রকট বৈষম্য থাকার দিকটিও উঠে এসেছে গবেষণায়। এতে দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ অর্থাৎ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ রয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ পরিবারের হাতে। এমনকি মোট সম্পদে তাদের এই অংশ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ম্যাককিনসি বলছে, বিশ্বের নিট সম্পদের ৬৮ শতাংশই রয়েছে রিয়েল এস্টেট খাতে। ভূমি, অবকাঠামো, ঘরবাড়ি, যন্ত্রপাতি, মেধাস্বত্ব-পেটেন্টসহ নানা মোড়কে রয়েছে এ সম্পদ।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বসম্পদের এই বৃদ্ধির বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। যেমন, সম্পদের মূল্য অনেক বেশি হারে বেড়েছে। রিয়েল এস্টেট খাতে সম্পদের দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক মানুষ বাড়ির মালিক হওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলতে পারে।
এটি আর্থিক ঝুঁকিও অনেক বাড়িয়েছে। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র অর্থনৈতিক
সংকটের বড় কারণ ছিল আবাসন খাতে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি। চীনেও এমন সংকট তৈরি
হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সম্ভাব্য একটিই সমাধান হতে পারে-
উৎপাদনশীল খাতে আরও বেশি সম্পদ বিনিয়োগ। এটি না হলে ঝুঁকি কোনোভাবেই কমবে
না। কারণ বর্তমান অবস্থায় সম্পদমূল্য পড়ে গেলে বিশ্বসম্পদের এক-তৃতীয়াংশ
হারিয়েও যেতে পারে।
মন্তব্য করুন