ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) শুদ্ধাচার সূচক অনুযায়ী প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম ঝুঁকিতে আছে নিউজিল্যান্ড এবং সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে সুদান।

বার্লিনভিত্তিক সংস্থাটি মঙ্গলবার গভর্নমেন্ট ডিফেন্স ইন্টিগ্রিটি ইনডেক্স (জিডিআই) বা সরকারি প্রতিরক্ষা শুদ্ধাচার সূচক-২০২০ প্রকাশ করে, যাতে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

সূচকে প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির সবচেয়ে কম ঝুঁকিতে থাকা নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৮৫। আর সর্বোচ্চ সংকটজনক দুর্নীতির ঝুঁকি থাকা সুদানের স্কোর ৫। নিউজিল্যান্ডের পরই রয়েছে যুক্তরাজ্য ও নরওয়ে (স্কোর ৭৬), বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস (স্কোর ৭৩)। আর সুদানের আগে রয়েছে মিসর (স্কোর ৬), মিয়ানমার, আলজেরিয়া (স্কোর ৮) এবং ইরাক (স্কোর ৯)।

সার্বিকভাবে ২৫ স্কোর করে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত এই সূচকে দুর্নীতির অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। সূচকে বিচার্য পাঁচটি ঝুঁকি ক্ষেত্রের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি স্কোর করেছে সামরিক জনবল ব্যবস্থাপনায়- স্কোর ৫২। সবচেয়ে খারাপ স্কোর ০-পরিচালনা ঝুঁকির ক্ষেত্রে। রাজনৈতিক ঝুঁকিতে স্কোর ২৬, আর্থিক ঝুঁকিতে স্কোর ১৯ এবং সামরিক ক্রয়ে দুর্নীতির ঝুঁকিতে স্কোর ২৯।

সূচক অনুযায়ী ৬২ শতাংশ দেশেরই প্রতিরক্ষা খাত উচ্চ থেকে সংকটজনক দুর্নীতির ঝুঁকিতে রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইয়ের এই সূচকের ফলাফল তুলে ধরা হয়। 

৮৬টি দেশ নিয়ে প্রকাশিত সূচক প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, এই সূচক বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতি বিরাজ করছে, এমন কোনো তথ্য বা বিশ্লেষণ দিচ্ছে না। তবে খাতটিতে শুদ্ধাচার ঘাটতি ও দুর্নীতির ব্যাপক ঝুঁকির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছে। অতএব, সূচকের ফলাফলকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের প্রতিরক্ষা শুদ্ধাচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো এবং তার মাধ্যমে সম্ভাব্য দুর্নীতির প্রতিরোধক সক্ষমতা কাঠামো সুদৃঢ় করা অপরিহার্য। একটি দেশের সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে সার্বিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও কাঠামোতে দুর্নীতির ঝুঁকি কতটা, ঝুঁকি কমাতে কী ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক নীতিকাঠামো ও চর্চা বিদ্যমান এবং সেগুলো কতটা কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক- এমন সব বিষয় বিবেচনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত দুর্নীতির উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। 

৭৭টি জিজ্ঞাসার বিপরীতে ২১২টি নির্দেশকের ভিত্তিতে একটি দেশের প্রতিরক্ষা খাতের পাঁচটি ঝুঁকির ক্ষেত্র বিশ্লেষণ করে জিডিআই ২০২০ সূচক প্রণয়ন করা হয়েছে। এই পাঁচটি ঝুঁকির ক্ষেত্র হলো- রাজনৈতিক, আর্থিক, জনবল, পরিচালনা এবং ক্রয়। এসব ক্ষেত্রে একটি দেশের প্রাপ্ত নম্বরকে (০ থেকে ১০০ স্কেলে) 'এ' থেকে 'এফ' শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। 'এ' শ্রেণি হলো সবচেয়ে কম ঝুঁকিসম্পন্ন এবং 'এফ' শ্রেণি হলো সংকটজনক দুর্নীতির ঝুঁকিসম্পন্ন। 

টিআই বলছে, জিডিআই সূচকে কম নম্বর পাওয়া দেশগুলোতে প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে থাকা সুরক্ষা পদ্ধতি বা কার্যক্রম দুর্বল কিংবা অস্তিত্বহীন। বলা চলে, একই সঙ্গে এসব দেশ অস্থিতিশীল, সংঘাতপূর্ণ কিংবা জনগণ শোষণের শিকার।