করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত শনাক্ত এবং বিশ্বের সঙ্গে নতুন এ ধরনটির গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য ভাগাভাগি করায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত শনিবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এক বিবৃতিতে এ প্রশংসা করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আনুষ্ঠানিক এ বিবৃতিকে চীনের গালে উপযুক্ত একটি 'চপেটাঘাত' হিসেবে বিবেচনা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এর মাধ্যমে করোনা নিয়ে বৈশ্বিক কূটনীতির বিষয়টি নতুন করে আবার সামনে চলে এলো।

এদিকে ইউরোপের আরও চার দেশে ছড়িয়েছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন। এর আগে ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামেও ধরনটি শনাক্ত হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে যুক্তরাজ্য। এ ছাড়া বিদেশিদের জন্য দরজা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করেছে ইসরায়েল। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের।

গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা মন্ত্রী নালেদি পান্ডোরের সঙ্গে কথা বলেন। আলাপকালে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত শনাক্ত করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান ব্লিংকেন। এ সময় আফ্রিকার জনগণকে টিকা দেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, যেরকম স্বচ্ছতার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ওমিক্রন ধরনটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করছে, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তারা বিশ্বের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে চীনের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে ইউরোপের নতুন চার দেশ- জার্মানি, ইতালি, চেক প্রজাতন্ত্র ও নেদারল্যান্ডসে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনার ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত দুই রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছে। ইতালিতেও ওমিক্রনে আক্রান্ত একজনকে শনাক্ত করার খবর পাওয়া গেছে। দেশটির ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, মিলানে একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, ওই ব্যক্তি ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত। চেক প্রজাতন্ত্রের উত্তরাঞ্চলের লিবারেক শহরের একটি হাসপাতালে একজন নারীর দেহে ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আঞ্চলিক ওই হাসপাতালের একজন এ খবর নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা একটি ফ্লাইটের যাত্রীদের মধ্যে ৬১ জনের কভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছিল বলে আগেই জানিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। গতকাল তাদের মধ্যে ১৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর এর আগে বতসোয়ানা, হংকং, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলেও এ ধরনে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনার নতুন এ ধরনটিকে 'উদ্বেগজনক' বলে আখ্যায়িত করার পর থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এরই মধ্যে নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হকুল ওমিক্রন ঠেকাতে রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধের মতো পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে বিশ্বের অনেক দেশ। এই তালিকায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সৌদি আরব, ইসরায়েল, মালদ্বীপের মতো দেশগুলো রয়েছে। জাপান, ভারত, ইরান, ব্রাজিল, থাইল্যান্ডও বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপের ২৭টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এরই মধ্যে সাময়িকভাবে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের কিছু দেশে ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে। যুক্তরাজ্য তাদের নাগরিকদের মাস্ক পরার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা ছাড়াও আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে। এ ছাড়া করোনার নতুন ধরনের বিস্তার ঠেকাতে ইসরায়েল ১৪ দিনের জন্য বিদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করবে বলে জানা গেছে।

এদিকে তড়িঘড়ি করে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফালা গত শুক্রবার বলেন, তাদের 'বলির পাঁঠা' বানানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'আমাদের মনে হচ্ছে, কিছু কিছু প্রতিক্রিয়া একেবারে অযৌক্তিক।' আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার এমন ক্ষোভের পেছনে যৌক্তিক কারণও রয়েছে। কারণ আলফা, বেটা, গামা এমনকি ডেলটার মতো মরণঘাতী ধরনের বেলায় বিভিন্ন দেশ 'ধীরে চলো' নীতি গ্রহণ করলেও ওমিক্রনের বেলায় এসে তা পুরোপুরি উল্টে গেছে।