নতুন বছরে দুই যুদ্ধ, ৫০ নির্বাচন
ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক ঝুঁকিতে বিশ্ব অর্থনীতি

ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০৪:৫৯ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০৫:০০
সপ্তাহ পেরোলেই নতুন বছর। তবে আসন্ন এ বছর নিয়ে এরই মধ্যে নানা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সামরিক সংঘাত এবং কয়েক ডজন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। লোহিত সাগরের প্রণালিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুটে হুতি বিদ্রোহীদের হামলা, গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ ঘিরে নতুন ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ ঘটনা এরই মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মুখোমুখি হওয়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
করোনাভাইরাস মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কার মুখোমুখি হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট অস্থিরতা এ প্রভাবকে আরও গভীর ও দীর্ঘ করে তুলতে পারে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশসহ প্রায় ৫০টি দেশের ২০০ কোটিরও বেশি মানুষ এসব নির্বাচনে অংশ নেবেন। এসব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের প্রতি অবিশ্বাস বাড়ছে। ভোটাররা তিক্তভাবে বিভক্ত এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে গভীর ও স্থায়ী উদ্বেগ রয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকারগুলোকে বাণিজ্য, বিদেশি বিনিয়োগ ও অভিবাসন বিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক পলিসির অধ্যাপক ডায়ান কোয়েল বলেন, এ ধরনের নীতি অর্থনীতিতে আমরা যেভাবে অভ্যস্ত ছিলাম, তার চেয়ে অনেক আলাদা একটি বিশ্বে রূপান্তরিত করবে। অনেক জায়গায় স্থবির আয়, জীবনযাত্রার মানের অবনতি এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের কারণে এরই মধ্যে বিশ্বায়ন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে ‘সংকুচিত বাণিজ্যের বিশ্ব হলো আয় সংকোচনের বিশ্ব’। অর্থাৎ বাণিজ্য কমার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আয়ও কমে যাবে। এতে জীবনযাত্রার মানে আরও অবনতি হবে।
আগামী বছর সবচেয়ে বড় নির্বাচন ভারতে। বর্তমানে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশটি বিশ্বের উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে। জানুয়ারিতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দ্বীপরাষ্ট্রটি ঘিরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে বেইজিং। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে।
ইন্দোনেশিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট নিকেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ নিয়ে সরকারের নীতি পরিবর্তন করতে পারেন। এ ছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অবশ্যই বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে। আসন্ন প্রতিযোগিতা এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করছে। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলস নির্বাচনের পর পর্যন্ত ইউরোপীয় ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, আমেরিকান হুইস্কি এবং মোটরসাইকেলের ওপর শুল্ক স্থগিত করতে সম্মত হয়েছে। এ চুক্তির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভোটের লড়াইয়ের সময় বাণিজ্য চুক্তিতে কঠোর হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন।
আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতির পূর্বাভাস এখন পর্যন্ত মিশ্র। বেশির ভাগ দেশে প্রবৃদ্ধির গতি ধীর এবং কয়েক ডজন উন্নয়নশীল দেশ তাদের ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ব অস্বস্তিকর জোট এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ব্লকে ভাঙন অব্যাহত থাকায় অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাপিয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপ রুশ জ্বালানি কেনা দ্রুত কমিয়ে দিয়েছে। তবে চীন, ভারত ও তুরস্ক রুশ জ্বালানি তেল, গ্যাস এবং কয়লা কিনতে এগিয়ে এসেছে। একই সময়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার মধ্যে ওয়াশিংটন ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়ে কাঁচামাল আমদানিতে বেইজিংনির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে। ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের লোহিত সাগরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বিশ্বজুড়ে আরও বিভক্তির লক্ষণ।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মধ্যবর্তী সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক ও ভূঅর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্রমাগত অস্থিরতা সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।