করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিপর্যস্ত আফ্রিকা মহামারির পর্ব থেকে বেরিয়ে এসে এখন দীর্ঘমেয়াদে ভাইরাসটিকে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকা প্রধান মাতশিদিসো মোতি।

গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা মহামারির পর্ব থেকে বেরিয়ে এসেছি। ভাইরাসটি যেহেতু থেকেই যাবে, তাই আমাদের দীর্ঘমেয়াদে একে মোকাবিলার করতে ব্যবস্থা নিতেই হবে।’ খবর আল জাজিরার।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মহামারি এখন অন্যদিকে মোড় নিয়েছে... তাই আমাদেরও অন্য কিছুই ভাবতে হবে। বিশেষ করে আমাদের টিকাদান কর্মসূচি আরও সম্প্রসারিত করতে হবে, কেননা আমাদের এই ভাইরাসটিকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হবে।’

গত দুই বছর ধরে করোনাভাইরাস একাধিক মোকাবেলা আফ্রিকা ‘দ্রুত ও চমকপ্রদ’ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও দাবি করেন মাতশিদিসো মোতি।

বিশ্বজুড়ে করোনার অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টার প্রকোপ শেষ হওয়ার পর অনেকের ধারণা ছিল যে, মহামারির শেষ হতে চলেছে। কিন্তু পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা করোনা নতুন ধরন ‘ওমিক্রনের’ অস্তিত্ব খুঁজে পান। এখন বিশ্বজুড়ে চলছে এই ভেরিয়েন্টের দাপট। এই ভেরিয়েন্টের প্রকোপে বিশ্বজুড়েই বাড়ছে আক্রান্তের হার, মৃত্যুর হারও নেহায়েত কম নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে কোনোভাবেই হালকা না ভাবতে বারবার অনুরোধ করছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, করোনা মহামারি শেষ হয়ে যায়নি। নতুন ভেরিয়েন্টের আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে যেকোনো সময়। আফ্রিকার নাগরিকরা এখনও ঝুঁকিতে রয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মোতি জানান, ৬৭০ মিলিয়ন ডোজেরও বেশি টিকা আফ্রিকা মহাদেশে এলেও মাত্র ১১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক আফ্রিকান নাগরিককে টিকার আওতায় আনা গেছে। 

মহামারি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও টিকাদানের বিষয়ে সাধারণের অনীহায় বিভিন্ন সময়ে প্রতিকূলতার মুখে পড়ায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে আফ্রিকার অর্থনীতিতে। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মহামারি আফ্রিকার ৪ কোটিরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে। 

মাতশিদিসো মোতি বলেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নিতে যদি দেরি করা হয় তাহলে প্রতি মাসে আফ্রিকার স্থানীয় পণ্যের বাজারে ১৩৮০ কোটির ডলারের বেশি আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মহামারিতে আফ্রিকা মহাদেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার অন্যান্য মহাদেশগুলোর তুলনায় যথেষ্ট কম। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সঠিকভাবে নিরূপন করা হয়নি এই মহাদেশে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আফ্রিকান নাগরিক তথা তরুণদের বড় একটা অংশ আফ্রিকার বাইরে থাকছে।  

মোতি জানান, বিশ্বের অনেক দেশ যখন বুস্টার ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে গেছে, তখন আফ্রিকার ৮৫ শতাংশ নাগরিক এখনও প্রথম ডোজের টিকাই নেননি।

মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিকাদান কর্মসূচিতে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মত ইমিউনিটি অর্জন করতে গেলে এই অঞ্চলে টিকা দেওয়ার কাজটা আরও এগিয়ে নিতে হবে। এখানে ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য হবে, কিভাবে মানুষকে টিকার আওতায় আনা যায়।’