রাশিয়ার আগ্রাসন আতঙ্কের মুখে ইউক্রেনীয়দের একা ফেলে পালাচ্ছে ইউক্রেনের জন্য বড় বন্ধু হয়ে তাদের রক্ষার প্রতিশ্রুতির হাঁকডাক দিয়ে যুদ্ধ-পরিস্থিতিকে প্রতিনিয়ত নাটকীয় করে তোলা দেশগুলো। কিয়েভ বলছে, মিত্র দেশগুলোর তড়িঘড়ি কূটনীতিক, সেনা ও নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক বাড়ছে, আতঙ্কই এখন বড় শত্রু। তবে দূতাবাস খালি করার পক্ষে অনড় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ। এদিন না সেদিন- রাশিয়া হামলা চালাতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের সূত্রের বরাত দিয়ে তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই পশ্চিমা গণমাধ্যম একের পর এক ব্রেকিং নিউজ প্রকাশ ও প্রচার করার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কায় ভুগছে গোটা ইউরোপ, এমনকি বিশ্ববাসীও। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। হামলার আশঙ্কাকে মিথ্যা প্রচার বলে দাবি করে আসছে মস্কো।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের সঙ্গে এরই মধ্যে দু'বার কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ নিয়ে হোয়াইট হাউস ও ক্রেমলিন যতটুকু জানিয়েছে, তার মোদ্দাকথা সেই একই। পুতিনকে বাইডেন বলেছেন, আগ্রাসন চালালে ভয়ংকর পরিণতি হবে। তবে পুতিন তাকে বলেছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে ছটফটানির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা। গতকাল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি সের্গেই নিকিফোরোভ জানিয়েছেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে শিগগিরই বাইডেনের সঙ্গে কথা বললেন তাদের প্রেসিডেন্ট ভালোদিমির জেলেনস্কি।

পুতিন-বাইডেন আলোচনার পরও 'যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি' থেকে সৃষ্ট আতঙ্কের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমসসহ খবরের বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করা পশ্চিমা গণমাধ্যম ও বার্তা সংস্থা ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক থেকে সরবরাহ করা তথ্য-উপাত্ত এবং কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে যেসব সংবাদ প্রচার করছে, তাতে রাশিয়া যে কোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে- এমন একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। স্যাটেলাইট চিত্রের বিশ্নেষণ করে গতকাল সিএনএন জানিয়েছে, তিন দিক থেকে ইউক্রেনকে ঘিরে ফেলেছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই মুহূর্তে রাশিয়া হামলা চালালে ইউক্রেন থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে না। ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে 'লাইভ' সংবাদ দিচ্ছে দ্য গার্ডিয়ান। গতকাল তারা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, জর্ডান, নেদারল্যান্ডস, কুয়েত, ইরাক, সাইপ্রাস, ফিনল্যান্ড- এই ১৩টি দেশ তাদের নাগরিকদের তাৎক্ষণিকভাবে ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ আরও কয়েকটি দেশ দূতাবাস কর্মীদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এ নিয়ে ইউক্রেন উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তাতে কান দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সাফ বলে দিয়েছেন, কিয়েভের দূতাবাস খালি করবেন তারা।

ইউক্রেনে নিজেদের নাগরিকদের সতর্ক থাকা ও নতুন করে কাউকে দেশটিতে ভ্রমণ না করতে নির্দেশ দিয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, গ্রিস ও চীন- এই ৯টি দেশ। নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, যুদ্ধ এড়ানো ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে কাজ করা ৫৭টি দেশ নিয়ে গড়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ জোট 'অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ' (ওএসসিই) গতকাল কিয়েভ থেকে তাদের কূটনীতিকদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। টানটান উত্তেজনার এই সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ বলে আখ্যা দিয়ে একে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতার আলোচনার সঙ্গে তুলনা করেছেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস। তবে তার সঙ্গে একমত নয় ইউক্রেন।