- আন্তর্জাতিক
- উত্তেজনার পারদ কমেনি
উত্তেজনার পারদ কমেনি

ইউক্রেনে সম্ভাব্য রুশ সামরিক আগ্রাসন নিয়ে মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর উত্তেজনা চলছে। গত বছরের শেষে সীমান্তে সেনা সমাবেশ কেন্দ্র করে এই পরিস্থিতি শুরু হয়। ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে বাধা দিতেই এই সামরিক অবস্থান বলে দাবি করছে ক্রেমলিন। হামলার উদ্দেশ্যে মস্কো এই সেনা মোতায়েন করেনি দাবি করলেও ক্রিমিয়া দখলের কারণে এখন আস্থা রাখতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্ররা। এদিকে শর্ত ভেঙে পূর্ব ইউরোপের ১৪ দেশকে সদস্য করেছে ন্যাটো। এ কারণে কিয়েভ নিয়েও পশ্চিমাদের ওপর ভরসা করতে পারছে না মস্কো। উভয়পক্ষ চুক্তি ভেঙে আস্থা হারিয়েছে। এই আস্থাহীনতার কারণেই যুদ্ধ পরিস্থিতির তৈরি হয়। এখন সব পক্ষ সামরিক শক্তি বাড়ালেও পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ এড়ানোর জন্য কূটনৈতিক চেষ্টা চালাচ্ছে।
গত বছরের শেষ দিকে ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা সমাবেশ করে রাশিয়া। মাঝেমধ্যে ওই সীমান্তে সামরিক মহড়া পরিচালনা করে তারা। তবে এবার সেনা মোতায়েনের পর ওয়াশিংটন ও কিয়েভ দাবি করে, ইউক্রেনে হামলার চালানোর জন্য সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো। তবে এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া জানায়, আক্রমণের কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের। এর পরও তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না পশ্চিমারা।
এর আগে ২০১৪ সালে এমনভাবে সীমান্তে সেনা সমাবেশের পর বিদ্রোহীদের সমর্থনে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয় রাশিয়া। পরে তাদের ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরই মধ্যে ২০১৪ ও '১৫ সালে বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকার স্বায়ত্তশাসন দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে মিনস্ক চুক্তি হয়। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ওই চুক্তি হলেও ইউক্রেন কখনও মেনে নেয়নি ওই চুক্তি। পরে তাদের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ক্রিমিয়া অঞ্চলের পানিপথ বন্ধ করে ওই অঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে কিয়েভ। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে রাশিয়া।
এখন ফের সেনা সমাবেশ করায় ওই দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুগানস্কের বিদ্রোহীদের সমর্থনে আবার হামলার আশঙ্কা করছে পশ্চিমারা। তারা এখন বলছে, যে কোনো মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে মস্কো।
এদিকে ন্যাটোর ওপর আস্থা রাখতে পারছে না ক্রেমলিন। কারণ আগের চুক্তি ভেঙে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশসহ পূর্ব ইউরোপের ১৪টি দেশকে সদস্য করেছে তারা। বর্তমানে ইউক্রেনের আগ্রহের কারণে 'সহযোগী সদস্য' করা হয়েছে। এখন যে কোনো সময় তারা এই জোটের সদস্য হতে পারবে। এই দেশটি ন্যাটোর সদস্য হলে মস্কোর দোরগোড়ায় তাদের শত্রু পৌঁছে যাবে, যা নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি তৈরি করবে। এ কারণে ন্যাটোকে ঠেকাতে তৎপর হয়েছে মস্কো।
উভয়পক্ষ বিভিন্ন সময় বেশ কয়েক দফায় চুক্তি ও শর্ত ভঙ্গ করায় পরস্পর আস্থা হারিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়া হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে না বা ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হচ্ছে না- বলা হলেও কেউ বিশ্বাস করছে না।
এরই মধ্যে মিত্র বেলারুশে স্মরণকালের বিশাল যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া। পাশাপাশি কৃষ্ণসাগরে নৌবহর নিয়ে নেমেছে মস্কো। এমন পরিস্থিতিতে পোল্যান্ড, রোমানিয়াসহ পূর্ব ইউরোপে সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো।
এমন যুদ্ধ-উন্মুখ পরিস্থিতিতে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এর পরই ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দমিত্রো কুলেবা বলেছেন, উত্তেজনা নিরসনে রাশিয়া ও ইউরোপীয় নিরাপত্তা দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক চায় ইউক্রেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আলোচনায় বসতে চায় তারা।
এরপরই যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাদিম প্রিস্টাইকো বলেছেন, যুদ্ধ এড়াতে প্রয়োজনে ন্যাটোতে যোগদানের পদক্ষেপ বাতিল করতে পারে তারা। পরে রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি নিরাপত্তা আলোচনাকে সংহত করবে।
বাইডেনের সঙ্গে কথা বলার পর জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া হামলার পরিকল্পনা চালাচ্ছে, এমন কোনো প্রমাণ তিনি পাননি। পরে পেশকভ বলেন, কিয়েভ ন্যাটোর উচ্চাভিলাষ ত্যাগ করলে উত্তেজনা করবে।
হামলার বিষয়ে রাশিয়াকে জি৭ সতর্ক করলেও ফরাসি ও জার্মান নেতারা এ সংকটের কারণে ইউরোপের নিরাপত্তা যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, উস্কানিতে কিয়েভ পা দেওয়ায় ইউরোপকে মূল্য চোখাতে হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক উপায়ে সংকট সমাধানের জন্য গতকাল কিয়েভ গেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। সেখানে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়ার বিরোধিতা এবং ন্যাটোর সদস্য হওয়ার জন্য কিয়েভের প্রচেষ্টা নিয়ে কিছু পশ্চিমা দেশের সংশয় সত্ত্বেও এখনও ওই জোটে যোগ দেওয়ার পক্ষে ইউক্রেন। তিনি আরও বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, মস্কোর সঙ্গে উত্তেজনার মুখে তার দেশের বেছে নেওয়া পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া উচিত। এদিকে, কিয়েভ থেকে আজ মস্কোয় গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ওলাফ। উত্তেজনা শুরুর পর থেকেই কূটনৈতিক তৎপরতায় সোচ্চার এই জার্মান নেতা। সূত্র :দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, তাস ও আরটি।
মন্তব্য করুন