রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আশা দেখছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মস্কোর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তাদের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া মিখাইলো পদোলিয়াকের সঙ্গে কথা বলার পর গতকাল এ মন্তব্য করেছেন তিনি। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ একই ধরনের আশার কথা শুনিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সায় রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের।

মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে অনলাইনে আলোচনা চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মস্কোর প্রতিনিধি দল। মস্কো প্রস্তাব দিয়েছে, ইউক্রেনকে সুইডেন ও অস্ট্রিয়ার মতো নিরপেক্ষ দেশ হতে হবে। তারা ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এরই মধ্যে স্পষ্ট করেছেন- তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হবে না।

ইউক্রেনের জন্য ন্যাটোর সদস্য হওয়ার সুযোগও কম। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কথায় তার প্রমাণ মিলেছে। তেলের জন্য আমিরাত সফরের প্রথম দিন বুধবার জনসন বলেছেন, শিগগিরই ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পথ ইউক্রেনের জন্য খোলা নেই।

তবে রাশিয়ার প্রস্তাবকেও গ্রহণ করেননি জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, ন্যাটোর সদস্য না হলেও ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাব- ইউক্রেনের জন্য এমন একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি করতে হবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের প্রতিবেশী দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই চুক্তিতে রাশিয়াও থাকবে। এভাবে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

ইউক্রেনের প্রস্তাব নিয়ে ভাবছে রাশিয়া। তবে মস্কোর আশা দেখার কারণও স্পষ্ট। এরই মধ্যে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার ইচ্ছা ত্যাগ করেছে ইউক্রেন। ফলে ভিন্ন উপায়ে হলেও তাদের জন্য বিকল্প নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে কতটা ছাড় দেওয়া যাবে, সেটিই এখন তাদের চিন্তার বিষয়।

দুই পক্ষের মধ্যে এ আলোচনা অব্যাহত থাকলেও ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে চলছে যুদ্ধ। রাজধানী কিয়েভের চারপাশে গোলা ও বোমা বর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। খারকিভ, কিয়েভ, সুমি, ওডেসা শহরসহ সর্বত্রই যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ দেখা যাচ্ছে। খাবার, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বেসামরিক মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গতকাল রাতে মারিউপোলের একটি থিয়েটার হলে হামলা হয়েছে। ওই হলে কয়েকশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল বলে দাবি করেছেন শহরটির মেয়র।

পিছু হটব- ভাবার মানে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়াকে বোঝেনি- পুতিন : গতকাল টেলিভিশন ভাষণে ?রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, যদি পশ্চিমারা মনে করে, আমরা পিছু হটব, তবে এর অর্থ দাঁড়াবে- তারা রাশিয়াকে ঠিকমতো বোঝেনি। ইউক্রেনে আমরা লক্ষ্য অর্জন করবই। রাশিয়াকে বিভক্ত করা ও বিশ্বব্যাপী আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় পশ্চিমাদের চেষ্টার কাছে মাথা নত করব না। নিষেধাজ্ঞা সামাল দিতে আমাদের মুদ্রাও ছাপা লাগবে না। এর জন্য যথেষ্ট সম্পদ রাশিয়ার আছে।

তবে এর আগে ক্রেমলিন জানায়, যৌক্তিকভাবে যুদ্ধ বন্ধের প্রয়োজনে লাগলে বাইডেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও রাজি আছেন প্রেসিডেন্ট (পুতিন)।

শরণার্থী ছাড়িয়েছে ৩১ লাখ :জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের ২১তম দিনে গতকাল বুধবার পর্যন্ত দেশটির শরণার্থীর সংখ্যা ৩১ লাখ ছাড়িয়েছে।

ইউক্রেন থেকে ফিরেছেন ইউরোপের তিন প্রধানমন্ত্রী :ইউক্রেনের জনগণের সঙ্গে সংহতি জানাতে আসা ইউরোপের তিন দেশের প্রধানমন্ত্রী গতকাল ফিরে গেছেন। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি হিসেবে এ সফর করেছেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মাতিউজ মোরাউকি, চেক প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা, স্লোভেনীয় প্রধানমন্ত্রী জানেস জানসা। তারা কিয়েভে জেলেনস্কির সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে কাজ করছেন সাংবাদিকরা :ফক্স নিউজের জন্য কাজ করছিলেন এমন একজন ক্যামেরাম্যান ও সাংবাদিক কিয়েভে নিহত হয়েছেন। ব্যাপক গুলিবর্ষণের মধ্যে পড়ে প্রাণ হারান তারা। এ নিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে এ পর্যন্ত চার বিদেশি সাংবাদিক নিহত হলেন।

ফক্স নিউজ তাদের দুই সাংবাদিকের মৃত্যুর ঘটনাকে 'হৃদয়বিদারক' হিসেবে বর্ণনা করেছে। নিহত দু'জনের সহকর্মী বেনজামিন হাল আহত হয়ে হাসপাতালে। এর আগে গত রোববার ৫০ বছর বয়সী মার্কিন সাংবাদিক ব্রেন্ট রেন্যঁ গুলিতে নিহত হয়েছিলেন।

মার্কিন কংগ্রেসে জেলেনস্কির ভাষণ :যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ভাষণ দিয়েছেন জেলেনস্কি। এ সময় তিনি ইউক্রেনের পাশে থাকার জন্য মার্কিন আইনপ্রণেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বিশ্বনেতার দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় রাশিয়ার হামলাকে পার্ল হারবার ও ৯/১১ হামলার সঙ্গে তুলনা করেন জেলেনস্কি।
আরও ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র :ইউক্রেনের জন্য আরও ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তায় অনুমোদন দিয়েছেন বাইডেন। এই অর্থ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি ইউক্রেনের যোদ্ধাদের দেওয়া হবে।

ইউরোপে আসছেন বাইডেন :আগামী সপ্তাহে ন্যাটোর সম্মেলনে যোগ দিতে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস সফর করবেন বাইডেন। ন্যাটোর সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বার্তা দিতে এবং তাদের সঙ্গে থাকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে তার এই সফর বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।