- আন্তর্জাতিক
- বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ জিনপিংয়ের, রাশিয়ার সমর্থন
বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ জিনপিংয়ের, রাশিয়ার সমর্থন

'অবিভাজ্য নিরাপত্তা'র মূলনীতি তুলে ধরে একটি 'বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগে'র প্রস্তাব দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এ ধারণাকে আগেই সমর্থন দিয়েছে রাশিয়া। যদিও এটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি। গতকাল বৃহস্পতিবার চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে জিনপিং এ প্রস্তাব দেন। খবর রয়টার্সের।
এশিয়ার ২৫টি দেশ ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সংস্থাটির বার্ষিক এ সম্মেলনে দেওয়া ভিডিও ভাষণে শি জিনপিং বলেন, 'চীন একটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ হাজির করতে পারে, যা নিরাপত্তার অবিভাজ্যতার নীতি বজায় রাখবে। আমাদের উচিত নিরাপত্তার অবিভাজ্যতা নীতি বজায় রাখা; ভারসাম্যপূর্ণ, কার্যকর ও স্থিতিশীল নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা এবং অন্য দেশকে অনিরাপদ করে এমন জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিরোধিতা করা।'
বক্তব্যে তিনি বলেন, রাশিয়াও সম্প্রতি পশ্চিমা সরকারগুলোকে 'অবিভাজ্য নিরাপত্তা' নীতির ওপর ভিত্তি করে ১৯৯৯ সালে হওয়া একটি সমঝোতার প্রতি সম্মান দেখাতে চাপ দিচ্ছে। ওই সমঝোতা অনুযায়ী, কোনো দেশই অন্য দেশের নিরাপত্তা খর্ব করে নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করতে পারে না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বেইজিং এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নিন্দা জানায়নি। একে মস্কোর পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে অস্ত্রনিরপেক্ষ দেশে পরিণত করার 'বিশেষ অভিযান' হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। বেইজিং ইউক্রেন সংকটের জন্য ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণকেই দায়ী করছে। বিশ্নেষকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপট ও এশিয়ায় মার্কিন কর্মকাণ্ডের প্রভাবের বাইরে এই প্রথম 'অবিভাজ্য নিরাপত্তা'র পক্ষে যুক্তি দিয়েছে চীন।
এর কারণ হিসেবে সিঙ্গাপুরের এস রাজানাথনাম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক লি মিনজিয়াং বলেন, 'চীন যদি মনে করে তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরে তার নিরাপত্তা উদ্বেগকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা উপেক্ষা করছে, তাহলে তারা যাতে একটি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নৈতিক অবস্থান দাবি করতে অবিভাজ্য নিরাপত্তা তত্ত্বকে তুলে ধরতে পারে।'
হংকংয়ের সিটি ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক ওয়াং জিয়ানজিয়ু বলেন, ইউরোপ থেকে উদ্ভূত এই অবিভাজ্য নিরাপত্তা ধারণা সামনে আনার মাধ্যমে চীন তার মূল স্বার্থরক্ষায় তার পদক্ষেপগুলোকে অন্যান্য দেশের কাছে বৈধ হিসেবে তুলে ধরতে চায়।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে জিনপিং যখন বৈশ্বিক নিরাপত্তার প্রস্তাব দিচ্ছেন তখন চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংহে ফোনালাপে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন। ওয়েই বলেন, 'যদি তাইওয়ান ইস্যুর সঠিক ব্যবস্থাপনা করা না হয়, তবে এটি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে।চীনা সামরিক বাহিনী দৃঢ়ভাবে সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করবে।' ভার্চুয়াল বৈঠকে তারা সমুদ্র, আকাশ নিরাপত্তা এবং ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
ভাষণে শি জিনপিংও একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও 'বিদেশিদের আইনি হস্তক্ষেপে'র বিরুদ্ধে চীনের অবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরেন। তবে ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলো যেসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সেগুলোর প্রসঙ্গ সরাসরি উল্লেখ করেননি তিনি।
চীনের প্রেসিডেন্ট এদিন পশ্চিমাদের সতর্ক করে বলেন, অর্থনৈতিকভাবে পৃথক করে দেওয়ার চেষ্টা এবং সরবরাহ শৃঙ্খল ছিন্নের মতো চাপ প্রয়োগের কৌশল কাজে আসবে না।
রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাসহ চীন ধারাবাহিকভাবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে এলেও মস্কোকে সহায়তার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করছে। কারণ মস্কোকে সহায়তা বেইজিংয়ের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথ করে দিতে পারে। বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে শি বলেন, এখন বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করার চেষ্টা জরুরি। তিনি আরও বলেন, চীনের অর্থনীতি স্বাভাবিক হচ্ছে এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা বদলায়নি।
মন্তব্য করুন