- আন্তর্জাতিক
- রাশিয়ার পরাজয় যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য
রাশিয়ার পরাজয় যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে কৌশলগত পরিবর্তনের আভাস স্পষ্ট হওয়ার পর তার সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে বড় রকমের উদ্বেগ-অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। রোববার কিয়েভে এক সফর শেষ করে পোল্যান্ডে ফিরে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল লয়েড অস্টিন খোলাখুলি বলেছেন, শুধু এই যুদ্ধে পরাজয় নয়, রাশিয়ার সামরিক শক্তি পাকাপাকিভাবে দুর্বল করে দেওয়াই এখন যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য।
জেনারেল অস্টিনের এই বক্তব্যের পরদিন ক্ষুব্ধ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভ বলেছেন, ন্যাটো জোট এখন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। সোমবার রাতে রুশ টিভি চ্যানেল রাশিয়া ফাস্টে এক সাক্ষাৎকারে লেভরভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট যদি ইউক্রেনকে ঢালাওভাবে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ না করে তাহলে একটি পারমাণবিক সংঘাত এবং তার জেরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে। এমন ঝুঁকি এখন খুবই বাস্তব একটি সম্ভাবনা, সেই ঝুঁকি এখন অনেক অনেক বেশি।
ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া নিয়ে এতদিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, এর উদ্দেশ্য ইউক্রেনের আত্মরক্ষায় সাহায্য করা। কিন্তু সম্প্রতি যে ধরনের অস্ত্র ইউক্রেনকে দেওয়া হচ্ছে বা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তাতে ন্যাটোর সেই লক্ষ্যে পরিবর্তনের আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মুখ থেকে রোববারের বক্তব্যের পর অনেক বিশ্নেষকই প্রশ্ন তুলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য কি ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখ তা রক্ষায় সাহায্য করা নাকি এই সুযোগে রাশিয়াকে ঘায়েল করা।
বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা জেমস ল্যান্ডেল বলছেন, এমন সব অস্ত্র এখন ইউক্রেনকে দেওয়া হচ্ছে, যা দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরেও আঘাত করা যাবে। ইউক্রেনকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করা আর রাশিয়াকে হামলার মধ্যে পার্থক্যটা ক্রমেই ধোঁয়াটে হয়ে যাচ্ছে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের মুখ থেকে ঘন ঘন এখন শোনা যাচ্ছে, এই যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় অনিবার্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়ার পরাজয় নিশ্চিত করতে আমেরিকা এবং তার ন্যাটো মিত্ররা যদি ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্র-সরঞ্জাম, রসদ জুগিয়ে চলে এবং বাড়িয়ে যেতে থাকে যে ইঙ্গিত তারা স্পষ্টভাবেই দিচ্ছে, তাহলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের সামনে রাস্তা কী?
ইউক্রেনে হামলা শুরুর নির্দেশ দেওয়ার সময় পুতিন হুমকি দিয়েছিলেন, কোনো পশ্চিমা শক্তি যদি এই যুদ্ধে সরাসরি মাথা ঘামায় তাহলে তাদের এমন পরিণতি ভোগ করতে হবে, যা ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র সে হুমকিতে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছে তার কোনো লক্ষণ নেই। রাশিয়ার সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধ চললেও, রাশিয়ার ওপর যেভাবে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং ইউক্রেনকে যেভাবে ক্রমাগত অস্ত্র দেওয়া হচ্ছে সেটাকে অনেক পশ্চিমা বিশ্নেষকও রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে ছায়া-যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করছেন।
মন্তব্য করুন