তার প্রিয় ভিলাটিতে প্রতিবাদকারীদের গ্রাফিতি। তার বাবার স্মরণে নির্মিত জাদুঘরটি তছনছ। আর জীবন বাঁচাতে শ্রীলঙ্কার পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুরক্ষিত সামরিক ঘাঁটিতে লুকিয়ে আছেন।

কয়েক দশক ধরে দ্বীপরাষ্ট্রটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ মাহিন্দার ভাগ্যও দৃশ্যত তার পৈতৃক ভিলার মতোই তছনছ হয়ে গেছে। দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের অবসানের জন্য অনেক শ্রীলঙ্কানের প্রিয় রাজাপাকসে পরিবারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি মাহিন্দা এখন গণবিচ্ছিন্ন।

কোভিড মহামারি এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট এবং জ্বালানি, ওষুধ এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের অভাব দেশটিকে গ্রাস করেছে। তীব্র লোডশেডিং এবং পেট্রোলের জন্য দীর্ঘ সারি দেশটির সাধারণ চিত্র। খাবারের দাম বাড়ছে। ২০০৯ সালে তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে সবচেয়ে অশান্তি বিরাজ করছে। এর মূল দায়ভার বর্তেছে রাজাপাকসে পরিবারের ওপর।

তাই দক্ষিণাঞ্চলীয় হাম্বানটোটার ছোট শহর ওয়েরাকেটিয়ায় ৭৬ বছর বয়সী মাহিন্দার পারিবারিক দুর্গসম ভিলাটিকেও রেহাই দেয়নি বিক্ষোভকারীরা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তিনি সরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই শত শত লোক তার ভিলা পাহারা নিয়োজিত পুলিশ অফিসারদের ওপর হামলা করে।

তারা তার পারিবারিক স্মৃতিচিহ্ন এবং ক্রীড়া ট্রফিসহ বাড়িটি ভাঙচুর করে। বাড়ির প্রাচীরে লাল রঙে 'গোটা গো হোম' গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। মাহিন্দার বেডরুমের জানালাগুলোও ভেঙে চুরমার করা হয়েছে।

অর্ধডজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং পুলিশ অফিসারদের সাক্ষাৎকারে জানা গেছে, রাজাপাকসেদের সম্পত্তি ধ্বংস করার জন্য সোমবার রাতে বিক্ষোভকারীদের প্রথম টার্গেট ছিল ভিলাটি। হামলার সময় এই পরিবারের কোনো সদস্য বাড়িতে ছিলেন না।

ওই পরিবারের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, 'আমি এরকম তাণ্ডব আগে দেখিনি। হামলায় আহত আমার সহকর্মীরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার সাহসও পাননি। কারণ চিকিৎসক এবং নার্সরা তাদের দেখলে খেপে যাতে পারেন বলে আশঙ্কা ছিল তাদের।'

১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পর সবচেয়ে দুঃসময় রাজাপাকসেদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ পরিবারটি হাম্বানটোটা জেলায় অবস্থিত গ্রামীণ জমির মালিক ছিল। ২০০৪ সালে মাহিন্দা প্রধানমন্ত্রী হলে রাজাপাকসেদের ভাগ্য খুলতে শুরু করে।

মাহিন্দা ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করলে তার ছোট ভাই গোটাবায়া হন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। পরে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটান তারা। তখন হাজার হাজার লোককে হত্যা করা হয়।

মাহিন্দা ২০১৫ সালে তৃতীয় মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করে হেরে যান। কিন্তু পরিবারটি ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে। তখন প্রেসিডেন্ট হন গোটাবায়া। ভিলায় হামলার পর দলটি গোটাবায়া এবং মাহিন্দার প্রয়াত পিতা সংসদ সদস্য ডিএ রাজাপাকসের স্মরণে নির্মিত জাদুঘরে চলে যান। তারা সেখনে গিয়ে অগ্নিসংযোগ করে।

বুধবার রয়টার্স জায়গাটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পায়, কালো মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা তাদের বাবার মুখের সোনালি আবক্ষ মূর্তি ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ক্ষমতাসীন দলের সাংসদদের বাড়িঘর ও দোকানপাটও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে এখনও কিছু স্থানীয় লোক রাজাপাকসে ভাইদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে এই কারণে যে, তারা তামিল বিদ্রোহ দমন করেছেন। তাদেরই একজন রত্নবিরা নন্দাসিরি। তিনি রাজাপাকসেদের দীর্ঘদিনের সমর্থক। তিনি বলেন, সরকার তাকে একটি অক্ষম ভাতা প্রদান করেছিল, যা মহামারি চলাকালে তাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি দেখতে পান, লোহার রড বহনকারী প্রায় ২০ জন লোকের একটি দল মাহিন্দার বাবার মূর্তি ধ্বংস করছে। তিনি এর প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বলেন, 'এটি সেই পুরুষদের বাবার যারা গৃহযুদ্ধ শেষ করেছে।'