রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এতদিন ধরে যে আলোচনা চলছিল, তা ভেস্তে গেছে। দু'পক্ষই জানিয়েছে, শান্তি আলোচনা আপাতত স্থগিত। তাদের মধ্যে আর কোনো আলোচনা চলছে না। এতদিন আলোচনার পরও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে না পারায় একে অপরকে দায়ী করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন।

রাশিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই রুডেনকো বলেছেন, কিয়েভ কার্যত আলোচনার টেবিল থেকে উঠে গেছে। আপস-মীমাংসার সামান্য সুযোগটুকুও তারা রাখেনি। আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার জন্য সামগ্রিকভাবে ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন তিনি। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বক্তব্য, ইউক্রেন নিজের স্বার্থের কথা ভাবছে না। তারা পশ্চিমা দেশগুলোর স্বার্থ নিশ্চিতে কাজ করছে। পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদের স্ট্র্যাটেজি সাজানোর জন্য ইউক্রেনকে কার্যত ব্যবহার করছে। এতে ইউক্রেনের কোনো লাভ হবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা সব সময়ই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চেয়েছিলাম। কিন্তু ইউক্রেন তা হতে দিচ্ছে না।

এদিকে রাশিয়াকে পাল্টা দোষারোপ করেছে ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পদোলিয়াক জানিয়েছেন, রাশিয়া কোনো রকম দাবিই মানতে রাজি নয়, তাই আলোচনা স্থগিত করতেই হলো। তারা কোনো সমাধানেও পৌঁছাতে আগ্রহী নয়। রাশিয়ার অবস্থান অত্যন্ত নেতিবাচক বলে অভিযোগ করেছেন পদোলিয়াক।

এদিকে মারিউপোলের ইস্পাত কারখানা আজভস্তলে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও প্রায় ৭০০ ইউক্রেনীয় যোদ্ধা আত্মসমর্পণ করেছেন বলে গতকাল বুধবার রাশিয়া জানিয়েছে। তবে তাঁদের নেতারা এখনও কারখানার ভেতরে লুকিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। এতে কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপে হওয়া সবচেয়ে দীর্ঘ ও রক্তাক্ত লড়াইয়ের অবসান বিলম্বিত হচ্ছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আরও ৬৯৪ জন আত্মসমর্পণ করায় এখন পর্যন্ত আজভস্তল ইস্পাত কারখানার মোট ৯৫৯ জন যোদ্ধা তাঁদের অস্ত্র নামিয়ে রাখলেন। এর আগে গত মঙ্গলবার ২৬৪ জন যোদ্ধা কারখানাটি ছাড়েন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলছেন, রুশ বন্দিদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় বন্দিদের বিনিময় করার বিষয়ে একটি চুক্তি হতে পারে। অন্যদিকে মস্কো বলেছে, 'নাৎসি' যোদ্ধাদের নিয়ে এ ধরনের কোনো চুক্তি হবে না। তবে ক্রেমলিন জানিয়েছে, বন্দিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী আচরণ করা হবে বলে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চয়তা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন।

যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত রাশিয়া ২৮ হাজারেরও বেশি সেনা হারিয়েছে বলে ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ। তিনি জানান, রাশিয়া ১ হাজার ২৫১টি ট্যাঙ্ক, ৩ হাজার ৪৩টি সাঁজোয়া যান, ৫৮৬টি আর্টিলারি ব্যবস্থা, ১৯৯টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম, ৯১টি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ২০২টি যুদ্ধবিমান, ১৬৭টি হেলিকপ্টার হারিয়েছে। তবে তাঁর এই দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত এপ্রিলে রাশিয়ার ৩৫ জন কূটনীতিককে ফ্রান্সের বহিস্কারের পর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দেশটির ৩৪ কূটনীতিককে বহিস্কার করার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। গতকাল বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই কথা জানিয়েছে। গত মাসে রাশিয়ার ছয় কূটনীতিককে গোয়েন্দা এজেন্ট ঘোষণা করে প্যারিস। অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কূটনীতিক সুবিধায় প্রবেশ করে এসব রুশ নাগরিক ফরাসি স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছিলেন।

ইউক্রেন সংকট নিরসনে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে চীনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে জাপান। চলমান পরিস্থিতিতে জাপান পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ নিয়েছে, অন্যদিকে চীন মস্কোর সঙ্গে দূরত্ব রেখে চললেও ইউক্রেনে হামলার ব্যাপারে নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাশা হায়াশি বলেছেন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে চীনের উচিত অবশ্যই রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলা।

সামরিক জোট ন্যাটোতে যুক্ত হতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। দেশ দুটির আবেদনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে মাত্র কয়েক সপ্তাহ লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের আবেদনের সময়টিকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত আখ্যা দিয়ে ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আবেদনকে স্বাগত জানাচ্ছি। আপনারা আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদার এবং আপনারা ন্যাটোর সদস্য হলে তা আমাদের সমন্বিত নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করবে। সূত্র :রয়টার্স, বিবিসি, আরটি, এএফপি ও আলজাজিরা।