- আন্তর্জাতিক
- দাদন দিয়ে ডাকাত পালতেন জাকির
দাদন দিয়ে ডাকাত পালতেন জাকির

ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জাকির হোসেনসহ (গোল চিহ্নিত) ডাকাতদলের সদস্যরা।
ঢাকার অদূরে টঙ্গীর নোয়াগাঁও এলাকায় পপুলার ওষুধ ফ্যাক্টরির অদূরে জাকির হোসেনের ভাঙারি দোকান। এলাকার লোকজনও তাকে চেনে পুরনো লোহা-লক্কর আর গৃহস্থালী পণ্য কেনা-বেচার ব্যবসায়ী হিসেবে।
তবে পুলিশ বলছে, এটি সাইনবোর্ডমাত্র। আড়ালে দুর্ধর্ষ ডাকাতদের আশ্রয়দাতা সে। মহাজনী ব্যবসার মতো দাদন দিয়ে ডাকাত পালন করে সে।
রাজধানীর উত্তরখানের ভাটুলিয়া এলাকার একটি বাড়িতে সংঘটিত ডাকাতির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এ জাকিরের তথ্য পায় পুলিশ। এরইমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ জাকিরসহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া মো. সবুজ, মো. ওমর ও ওসমান গনি স্বপন জাকিরের হয়ে ডাকাতি করতো।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ওই ডাকাতির ঘটনায় হওয়া মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে জাকিরের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা উত্তরখানের ওই বাড়িতে ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে। গত ৪ এপ্রিল দিবাগত রাতে বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ তিন লাখ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ অন্তত ৮ লাখ টাকার মালামাল লুট করেছিল এরা।
ওই চারজনকে গ্রেপ্তারের অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিমের এডিসি কায়সার রিজভী কোরায়েশী বলেন, জাকির দাদন দিয়ে ডাকাত সদস্যদের লালন-পালন করতো। সদস্যরা বিপদে পড়লে তার কাছ থেকে টাকা নিতো। আবার ডাকাতির টাকা ও মালামাল তার দোকানে নিয়ে আসতো দলের সদস্যরা। সে এসব রেখে বেতন আকারে টাকা দিতো সদস্যদের।
‘এই জাকির মাদক কেনার টাকাও দিতো ডাকাত দলের সদস্যদের। তারা কেউ ডাকাতি করে বা অন্য অপরাধ করে কারাগারে গেলে পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিতো সে’, বলছিলেন ডিবি কর্মকর্তা রিজভী কোরায়েশী।
পায়ের গোড়ালি দেখে রহস্য উদ্ঘাটন
এডিসি কোরায়েশী বলেন, উত্তরখানের ওই ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তাদের কিছুটা হোঁচট খেতে হয়। তদন্তে নেমে দেখি, বাসাটিতে আসা ডাকাত দলের সদস্যরা কোনো ডিভাইস ব্যবহার করেনি। সেখান থেকে অন্যান্য মালামালের সঙ্গে তিনটি মোবাইল ফোন লুট হলেও তা বাসার পেছনে পাওয়া যায়। রাজধানীর একেবারে শেষ সীমানায় ওই বাড়ির অবস্থান হওয়ায় সেখানে বা আশপাশের রাস্তাতেও সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। এজন্য প্রযুক্তিগত তদন্তে বেশি দূর যাওয়া যায়নি। এরপরই ম্যানুয়ালি তদন্ত শুরু হয়। ডাকাতির শিকার গৃহকর্তা আহসান উদ্দিন ও তার পরিবারের কাছ থেকে ডাকাতদের বিবরণ নেওয়া শুরু করি। কিন্তু সব ডাকাত মুখোশ পড়া থাকায় ধাক্কা খেতে হয় তাতেও।
তবে আহসান জানিয়েছিলেন, একজনের পায়ের গোড়ালিতে খোস-পাচড়ার দাখ দেখা গেছে, মাথার চুল অনেকটা সাদা-কালো। তা ধরেই চলতে থাকে তদন্ত।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গ্রিল কেটে ডাকাত সদস্যরা বাসাটিতে ঢুকেছিল। বাসায় নগদ তিন লাখ টাকা রয়েছে-লুটপাটের সময়ে তাও চাচ্ছিল এরা। তখন মনে হচ্ছিল, স্থানীয় কেউ জড়িত। এজন্য গোটা এলাকার গ্রিল কাটা কোনো চোর বা ডাকাত রয়েছে কি-না তার তদন্ত শুরু হয়। একজন পেলেও রহস্য উদ্ঘাটন হয় না। বর্ণনা দেখে মনে হচ্ছিল, ডাকাতিতে আশা লোকজন শ্রমিক শ্রেণির। এরপর আশপাশের এলাকায় ভাঙারির দোকানগুলোতে সোর্স লাগানো হয়। জাকিরের দোকানে অনেকটা মিলে যায় ভিকটিমের বর্ণনা দেওয়া এক ব্যক্তির সঙ্গে। এভাবেই চলতে থাকে তদন্ত।
এডিসি কায়সার রিজভী কোরায়েশী বলেন, নিজেই ছদ্মবেশে চলে যান জাকিরের দোকানে। টানা তিন দিন নজরদারি করতে থাকেন শ্রমিক বেশে। তার টিমের সদস্যরাও শ্রমিক সেজে উত্তরখান এলাকায় অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে জাকিরের দোকান থেকেই ওসমান গনি স্বপনকে পাওয়া যায়, তার পায়ের গোড়ালিতে দেখা যায় খোস-পাচড়ার দাগ। শেষ পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ডাকাতি রহস্য।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাকির সরাসরি কোনো ডাকাতিতে যায় না। সে শুধু ডাকাতদের লালন-পালন করে। ডাকাতিতে সরাসরি যুক্ত গ্রুপটির অন্যতম প্রধান ফারুক হোসেন নামে একজন। উত্তরখানের ওই ডাকাতির পর অন্য একটি ডাকাতি মামলায় ফারুক কারাগারে যায়। বর্তমানে সেখানে থাকলেও তাকে এই মামলায় শোন অ্যারেস্টের আবেদন করা হয়েছে।
ডাকাতির শিকার আহসান উদ্দিন একটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা। মঙ্গলবার তিনি সমকালকে বলেন, ঘটনার সময়ে বাসায় তিনি ছাড়াও তার স্ত্রী, চার বছরের মেয়ে ও বৃদ্ধ বাবা ছিলেন। ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে লুটপাট চালায়।
মন্তব্য করুন