- আন্তর্জাতিক
- কে এই দ্রৌপদী মুর্মু?
কে এই দ্রৌপদী মুর্মু?

দ্রৌপদী মুর্মু।
আদিবাসী রাজনীতিবিদ দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আগামী মাসে দেশটির রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
উড়িষ্যা থেকে আসা রাজনীতিবিদ ৬৪ বছর বয়সি সাবেক এ শিক্ষকের বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক কয়েক দশক পুরনো। গভর্নরের দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। যদি নির্বাচিত হন, তবে মুর্মু হবেন দেশটির শীর্ষ এ পদে প্রথম আদিবাসী ব্যক্তি।
ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু এই পদটি মূলত আলংকারিক। রাষ্ট্রপতি এক নির্বাচকমণ্ডলীর দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। এই নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হয় ভারতীয় সংসদ (লোকসভা ও রাজ্যসভা) এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার সদস্যদের নিয়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রার্থীকে জেতানোর মতো যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে বিজেপির।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, মুর্মু একজন ‘মহান রাষ্ট্রপতি’ হবেন সে বিষয়ে তিনি ‘আত্মবিশ্বাসী’।
বিজেপির পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভার পর মঙ্গলবার দলের প্রধান জেপি নাড্ডা রাষ্ট্রপতি পদে মুর্মুর প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ২০ জনের নাম যাচাই বাছাই শেষে মুর্মুকে বেছে নেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপির পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন, বিষয়টি টেলিভিশনে প্রচারিত খবর থেকে জানতে পারেন মুর্মু। তিনি বলেন, এ খবর তাকে ‘অবাক’ ও ‘আনন্দিত’ করেছে।
মুর্মু সংবাদিকদের বলেন, প্রত্যন্ত ময়ূরভঞ্জ জেলার একজন আদিবাসী নারী হিসেবে, আমি কখনওই ভাবিনি সর্বোচ্চ এ পদে প্রার্থী হওয়ার।
উড়িষ্যায় সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে আদিবাসী এ রাজনীতিবিদ শুভেচ্ছা পেয়েছেন। তাকে অভিহিত করা হচ্ছে, ‘ডটার অব দ্য সয়েল’ হিসেবে।
মুর্মু আশা করছেন, রাজ্যের নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের সমর্থন তিনি পাবেন। নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহার। যশবন্ত অটল বিহার বাজপেয়ীর সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিনহা এখন বিজেপি ও মোদি সরকারের কট্টর সমালোচক। শারদ পাওয়ার, ফারুক আব্দুল্লাহ ও গোপালকৃষ্ণ গান্ধী বিরোধীদের পক্ষ থেকে এ পদে লড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর সিনহার মনোনয়নের বিষয়টি সামনে আসে।
১৮ জুলাই দেশটির রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ফল ঘোষণা করা হবে ২১ জুলাই। নির্বাচিত ব্যক্তি বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্থলাভিষিক্ত হবেন। রামনাথের মেয়াদ শেষ হবে ২৪ জুলাই।
কে এই দ্রৌপদী মুর্মু
মুর্মু প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৭ সালে। সে সময় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপির পক্ষ থেকে তার নাম বিবেচনা করা হচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তিনি তখন ঝারখণ্ডের গভর্নর।
উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ জেলার বাইদাপসী গ্রামে ১৯৫৮ সালের ২০ জুন জন্ম হয় তার। সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সদস্য তিনি। এটি ভারতের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীন জাতিগোষ্ঠী। গ্রাম পরিষদ প্রধানের এ মেয়ে পড়াশোনা করেছেন রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরের রামাদেবী মহিলা কলেজে। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি উড়িষ্যা সরকারের সেচ ও শক্তি বিভাগের জুনিয়র সহকারী হিসেবে ১৯৭৯-৮৩ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত তিনি রায়রংপুরের শ্রী অরবিন্দ ইন্টেগরাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে করেন শিক্ষকতা।
তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৯৭ সালে, যখন তিনি রায়রংপুরে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। শহরটি তার জন্মস্থান থেকে কাছেই। বিজেপির সদস্য হিসেবে ২০০০ ও ২০০৯ সালে দুইবার বিধায়ক নির্বাচিত হন রায়রংপুর থেকেই।
২০০০ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত তিনি রাজ্যের নবীন পাটনায়েকের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। প্রাথমিকভাবে তার দায়িত্ব ছিল কর্মাস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টের। পরে তিনি ফিসারিজ ও অ্যানিমাল রিসোর্স বিভাগের দায়িত্বও সামলান।
২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত মুর্মু বিজেপির আদিবাসী মোর্চার উড়িষ্যা রাজ্যের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তবে ২০১৫ সালে ঝারখণ্ডের প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে আসেন। তিনি রাজ্যের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া উড়িষ্যার প্রথম আদিবাসী নেতা এবং এ পদে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।
সূত্র: বিবিসি
মন্তব্য করুন