- আন্তর্জাতিক
- ‘এক দেশ, দুই নীতি’ পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই: শি জিনপিং
‘এক দেশ, দুই নীতি’ পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই: শি জিনপিং

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও হংকংয়ের নতুন প্রধান নির্বাহী জন লি। ছবি: রয়টার্স
হংকং শাসনে চীনের ‘এক দেশ, দুই নীতি’ মডেল শহরটির সুরক্ষায় কাজ করেছে এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি অব্যাহত রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন শি জিনপিং।
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, এ ধরনের ভালো ব্যবস্থা পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমালোচনার মধ্যে শুক্রবার হংকংয়ের হস্তান্তর দিবসে এ রাজনৈতিক নীতি সম্পর্কে নিজের অবস্থান এভাবেই তুলে ধরলেন তিনি। খবর বিবিসির।
প্রতি বছরের ১ জুলাই হস্তান্তর দিবস উদযাপন করে হংকং। ১৯৯৭ সালের এদিন ব্রিটেনের কাছ থেকে চীনের অধীনে আসে শহরটি।
এ উপলক্ষে শহরজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। কেননা, ২০২০ সালের পর এই প্রথম চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে হংকং সফরে গিয়েছেন জিনপিং।
হস্তান্তর চুক্তি অনুযায়ী, চীন রাজি হয়েছিল যে, হংকং হস্তান্তরের পর থেকে ৫০ বছর ‘উচ্চ মাত্রার স্বায়ত্তশাসন’ ভোগ করবে এবং কিছুটা স্বাধীনতা বজায় থাকবে। কিন্তু ২৫ বছর পর, এ শহরের ওপর বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ক্রমাগত বাড়ছে। অন্য বছর এ বর্ষপূর্তিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু ২০২০ সালে নিরাপত্তা আইন চালুর পর এটি মুক্তমত ও ভিন্নমতকে দমিয়ে দিয়েছে।
এ ‘এক দেশ, দুই নীতি’র মেয়াদ শেষ হবে ২০৪৭ সালে। এটি নিয়েই শহরটির বাসিন্দারা এখন থেকেই চিন্তিত।
কিন্তু শুক্রবার জিনপিং এ নীতির ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, এ নীতি দীর্ঘদিন ধরে মেনে চলতে হবে। এক দেশ, দুই নীতি বারবার পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত। এ ধরনের ভালো ব্যবস্থা পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই।
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, এ ব্যবস্থার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘বিস্তৃত অনুমোদন’সহ শহরের বাসিন্দাদের ‘সর্বসম্মত অনুমোদন’ রয়েছে। আর হংকংয়ে ‘প্রকৃত গণতন্ত্র শুরু হয়’ চীনের অধীনে আসার পর থেকেই।
কিন্তু গত কয়েকবছরে হংকংয়ে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে। যা কঠোরভাবে দমন করেছে বেইজিং। তবে শহরটিতে চীনের এ নাক গলানোয় অসন্তুষ্ট পশ্চিমা দেশগুলো।
২০২০ সালে চীন একটি বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে। যা মূলত হংকংয়ের মুক্তমত ও ভিন্নমতকে দমন করার জন্য। আর এতেই যুক্তরাজ্যের অভিযোগ, চীন ‘এক দেশ, দুই নীতি’ চুক্তি ভঙ্গ করছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন শুক্রবার বলেছেন, আমরা হংকংয়ে হাল ছেড়ে দিচ্ছি না। ২৫ বছর আগে আমরা ওই ভূখণ্ড ও তার জনগণের কাছে একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এবং আমরা তা পালন করতে চাই। আমাদের পক্ষে যা সম্ভব তা করার মাধ্যমে চীনকে তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাধ্য করার চেষ্টা থাকবে যেন, হংকং আবারও তার জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য পরিচালিত হয়।
চীন সম্প্রতি হংকংয়ে নির্বাচনে শুধু ‘দেশপ্রেমিকরা’ যেন অংশ নিতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য সেভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করেছে। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা সহ্য করতে হচ্ছে বেইজিংকে।
কিন্তু জিনপিং তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। তিনি এ ব্যবস্থার পক্ষে নিজের জোরালো অবস্থানের কথা জানিয়েছে। তিনি বলেন, এটি হংকংয়ের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজন ছিল। এ নীতির ক্ষেত্রে আপস করতে দেওয়া উচিত হবে না।
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, কোনো দেশ বা ভূখণ্ডের নাগরিকরা অ-দেশপ্রেমিক, এমনকি বিশ্বাসঘাতক, বাহিনী এবং জনগণকে রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হতে দেবে না।
এ অনুষ্ঠানে জিনপিং আনুষ্ঠানিকভাবে জন লিকে হংকংয়ের নতুন নির্বাহী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। লি সাবেক নিরাপত্তা প্রধান এবং কট্টর বেইজিংপন্থি। এদিকে লির ২১ সদস্যের মন্ত্রিসভাও শপথ গ্রহণ করেছে। আর এ অনুষ্ঠান ছাড়াও হস্তান্তর দিবস উপলক্ষে শহরজুড়ে নানা সরকারি অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে।
মন্তব্য করুন