ইউক্রেনে রুশ হামলার সূত্র ধরে রাশিয়ার ওপর হাজারও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো। নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে বাদ যায়নি রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের পরিবারের সদস্য, কাছের বন্ধু-বান্ধব, কর্মকর্তা, দেশটির লাভজনক কোম্পানি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোও। মস্কোকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে রাশিয়ার বিভিন্ন খাতের ওপর এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপ করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স তাদের এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পশ্চিমা ও তাদের মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার বাইরে রয়ে গেছেন অনেক বড় বড় রুশ অস্ত্র ব্যবসায়ী, যাঁদের অনেকেই পুতিনের চরম আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত কয়েক ডজন রুশ অস্ত্র ব্যবসায়ীসহ ৩৬টি অস্ত্র প্রস্তুতকারী কারখানা এবং ১৪টি কোম্পানি এখনও মার্কিন ও অন্য দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার বাইরে রয়ে গেছে।

রয়টার্স বলছে, নিষেধাজ্ঞার বাইরে রয়েছেন রুশ অস্ত্র ব্যবসার অন্যতম মোগল অ্যালান লুশনিকভ। তিনি কালাশনিকভ কোম্পানির সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান জেএসসির অন্যতম বিনিয়োগকারী। এ প্রতিষ্ঠানটি একে-৪৭ রাইফেল উৎপাদনের জন্য বিশ্বজুড়ে বেশ পরিচিত। লুশনিকভ ওই কোম্পানির ৭৫ শতাংশের মালিক বলে জানিয়েছে রয়টার্স। রাশিয়ার তৈরি মেশিনগান, স্নাইপার রাইফেল, পিস্তল এবং অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্রের মোট ৯৫ শতাংশ এবং মিলিটারি মেশিনগানের ৯৮ শতাংশ উৎপাদন করে অ্যালান লুশনিকভের মালিকানাধীন জেএসসি। এ ছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমানবিধ্বংসী সিস্টেম বিশেষজ্ঞ মস্কোভিত্তিক প্রতিরক্ষা সংস্থা আলমাজ-অ্যান্টি কনসার্নের ব্যাপারেও একই কাণ্ড ঘটেছে। সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা পেলেও প্রতিষ্ঠানটির সিইও ইয়ান নোভিকভকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। এমন আরও অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করেছে রয়টার্স।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর ওডেসায় শুক্রবার ভোররাতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে। কৃষ্ণ সাগরের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ডের দখল ছেড়ে দেওয়ার এক দিন পর এই হামলার ঘটনা ঘটল। প্রাথমিকভাবে হামলায় তিন শিশুসহ ছয়জন নিহত হওয়ার কথা জানানো হলেও পরে ওডেসা আঞ্চলিক প্রশাসনের মুখপাত্র সেরহি ব্রাৎচুক জানান, একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে হামলার ফলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। যদিও হামলার ঘটনা এখনও যাচাই করতে পারেনি সংবাদমাধ্যমগুলো।

এদিকে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর লিসিচানস্কে একটি তেল শোধনাগার দখলের দাবি করেছে রাশিয়া। কিন্তু ইউক্রেন এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। রুশ সমর্থিত লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক (এলপিআর)-এর সহকারী মন্ত্রী ভিটালি কিসেলেভ জানান, আমাদের সেনারা তেল শোধনাগারের ভেতরে প্রবেশ করেছে।

লিসিচানস্কের ৫০ শতাংশ জায়গা নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়ান বাহিনী। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাশিয়া এখনও শহরের তেল শোধনাগার এলাকায় হামলা চালাচ্ছে। তারা আংশিক সাফল্য পেয়েছে। এখনও নিজেদের প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। রাশিয়ার হামলায় বেসামরিক মানুষ হতাহতের কারণ ব্যাখ্যা করে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওলেক্সি হরোমভ বলেছেন, চলমান যুদ্ধে ৫০ শতাংশের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সোভিয়েত আমলের নির্ভুলভাবে আঘাতে সক্ষম নয় এমন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে রুশ বাহিনী। ফলে উল্লেখযোগ্য বেসামরিকের প্রাণহানি হচ্ছে। এই সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, শিল্প, পরিবহন নেটওয়ার্ক লক্ষ্য করে অস্ত্র চালায় রাশিয়া। কিন্তু লক্ষ্যস্থল নির্ভুল না হওয়ায় গুরুতর বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

রাশিয়ার হাইড্রোকার্বনের ওপর থেকে ইউরোপের নির্ভরশীলতা কমাতে ইউক্রেন থেকে রোমানিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে কিয়েভ। এক ভিডিও বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, এটি রপ্তানি আয়ের বিষয় নয়, এটি পুরো ইউরোপের নিরাপত্তার প্রশ্ন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের পথে এটি আমাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের দিন থেকে গত ১০০ দিনে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির অন্যতম ক্রেতা ছিল জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। তবে এককভাবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন, দ্বিতীয় অবস্থানে জার্মানি। শতাংশের ভিত্তিতে আমদানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে রয়েছে ভারত। গত ১০০ দিনে রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির ১৮ শতাংশ ভারত কিনেছে।