কলকাতার রাস্তা থেকে অসুস্থ ও মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় উদ্ধার হওয়া সিলেটের জবলু মিয়া বাড়ি ফিরতে চান। ২৭ বছর বয়সী ওই যুবক পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া কীভাবে, কখন ভারতে পৌঁছেছেন তাও ঠিক করে বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় তাঁকে দেশে ফেরানোর জটিলতা নিয়ে চিন্তিত জবলুকে উদ্ধার ও পরবর্তী সময়ে চিকিৎসার মাধ্যমে কিছুটা সুস্থ করে তোলা কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা। বর্তমানে তিনি সেন্টার ফর আরবান হোমলেস নামের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। তারাই তার পরিচয় শনাক্ত করেছে।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, গত ১৫ মার্চ কলকাতার মৌলালি মোড়ের কাছে সিআইটি রোডের ফুটপাত থেকে জবলুকে উদ্ধার করা হয়। দীর্ঘদিন গৃহহীন অবস্থায় অর্ধাহারে, অনাহারে থাকায় শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। এরপর তাঁকে নেওয়া হয় কলকাতার বেলেঘাটা মেইন রোডে সংস্থাটির আবাসিক হোমে।
সেখানে উন্নত চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান পাওয়া এবং চিকিৎসায় ধীরে ধীরে বাকশক্তি ও স্মৃতিশক্তির ক্রমেই উন্নতি হয় জবলুর। এরপর তিনি জানান, বাংলাদেশের সিলেটের বালাগঞ্জের সুলতানপুরে তাঁর বাড়ি। ঠিকানা নিশ্চিত হতে পশ্চিমবঙ্গের হ্যাম রেডিওর কর্মীরা যোগাযোগ করেন বাংলাদেশ অ্যামেচারিস্ট হ্যাম রেডিও সোসাইটির সম্পাদক অনুপ ভৌমিকের সঙ্গে। অনুপ ভৌমিক ও সিলেট বিভাগের অ্যামেচারিস্ট হ্যাম রেডিও অপারেটররা দ্রুত জবলুর পরিবারের সন্ধান পান।
জবলু মিয়ার পরিবার জানায়, ২০২১ সালের নভেম্বরে সিলেটের সুলতান থেকে নিখোঁজ হন ব্যবসায়ী চাঁদ আলীর ছেলে জবলু মিয়া। দুই দেশের হ্যাম রেডিও অপারেটরদের মাধ্যমে দীর্ঘ ৯ মাস পর ভিডিও কলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। দীর্ঘ দিন পর ছেলেকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বাবা-মা। ছেলে জীবিত ও সুস্থ আছে দেখে কৃতজ্ঞতা জানান হোম কর্তৃপক্ষের প্রতি।
এদিকে জবলু মিয়ার পাসপোর্ট-ভিসা না থাকায় তাঁকে বাংলাদেশে পাঠানো নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। এ অবস্থায় হ্যাম রেডিওর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাহায্য চাওয়া হয়েছে বলে জানান হোমের সুপারভাইজার পম্পা পাত্র। ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দুই দেশের সরকারি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁকে পরিবারের কাছে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
হোমের আরেক সুপারভাইজার সনৎ কুমার পাল বলেন, তাঁকে উদ্ধারের পর বেলেঘাটা থানায় জানানো হয়েছিল। এর পর দীর্ঘদিন তাঁর চিকিৎসা হয়েছে পাবলভ মেডিকেল কলেজে। তাকে দেশে ফেরাতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে সমকালকে অসংলগ্নভাবে জবলু মিয়া জানান, মামার সঙ্গে দালালের মাধ্যমে কলকাতায় পৌঁছান তিনি। এ সময় মামা তাঁকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েন। যদিও তাঁর এ দাবি অস্বীকার করেছে পরিবার।