- আন্তর্জাতিক
- রনিলের শপথ বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
শ্রীলঙ্কা সংকট
রনিলের শপথ বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
রাজাপাকসে সরকারের মন্ত্রীরাই শপথ নেবেন আজ

তীব্র অর্থনৈতিক সংকট। খাদ্যপণ্য, জ্বালানিসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বমূল্য। ব্যাপক অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ। এসবের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তবে তাঁকে মেনে নেননি বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে বিশ্নেষকরা বলছেন, রনিলের সামনে ঋণে জর্জরিত একটি দেশের ত্রাতা হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
নতুন প্রেসিডেন্টের অধীনে আজ সাবেক গোটাবায়া রাজাপাকসে সরকারের মন্ত্রীরাই শপথ নেবেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন দীনেশ গুণাবর্ধনে। তিনিও শপথ নেবেন আজ।
কলম্বো থেকে প্রকাশিত ডেইলি মিরর অনলাইন জানায়, এ মন্ত্রিসভা নতুন একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ওই সরকার গঠন হলে মন্ত্রিসভায় রদবদল আসবে।
গণবিক্ষোভের মুখে সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালানোর এক সপ্তাহের মধ্যে রনিল প্রেসিডেন্ট হলেন। তিনি ছয়বার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত থাকবে তাঁর ক্ষমতার মেয়াদ। তবে তাঁর বিরুদ্ধেও চাপা ক্ষোভ রয়েছে লঙ্কানদের মনে। সে কারণে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন না এলে অনিবার্যভাবে আবারও গণবিক্ষোভ হতে পারে।
শ্রীলঙ্কার ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা ৭৩ বছরের রনিল চার দশকের বেশি সময় ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাঁকে রাজাপাকসেদের অনুগামী বলে মনে করেন। খাদ্যপণ্য, জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কাজুড়ে রাজাপাকসেদের সঙ্গে রনিলের পতনের দাবিতেও বিক্ষোভ হয়। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কলম্বোতে তাঁর বাসভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিক্ষোভকারীদের হামলার মুখে পড়ে।
বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে রনিলের বার্তা, তিনি কঠোরহস্তে বিক্ষোভ দমন করবেন। ইতোমধ্যে তিনি বলেছেন, যদি কেউ সরকার পতন ঘটাতে চায়, প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখল করতে চায়, তাহলে তা 'গণতন্ত্র নয়'; এটা আইনবিরোধী। তিনি বলেন, তাঁরা সেটা আইন অনুযায়ী কঠোরহস্তে দমন করবেন। তবে বিক্ষোভকারীরা আবারও রনিলের বিরুদ্ধে জড়ো হতে পারেন- সেই শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
শালিবা উইমালাসেনা নামের এক বিক্ষোভকারী আলজাজিরাকে বলেন, আন্দোলনকারীদের এখনই আবার একত্র হতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে সামনে এগোতে হবে। তাঁরা যত অপেক্ষা করবেন, শোষণের জন্য রনিল তত সুযোগ পাবেন। তিনি বলেন, রাজাপাকসেদের সুরক্ষা দিতেই প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে রনিলকে। জনপ্রিয় অভিনেত্রী দামিতা আবেরত্নে বলেন, বিক্ষোভকারীরা সম্মানিত কোনো ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার চাচ্ছেন, যিনি দেশকে একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু বিক্ষোভকারী রনিলকে একটি সুযোগ দিতে চাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
গত বুধবার আইনপ্রণেতাদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রনিল। শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, তাঁর দেশ 'খুব কঠিন পরিস্থিতি'তে রয়েছে; সামনে অনেক 'বড় বড় চ্যালেঞ্জ'।
এর আগে গত ১৩ জুলাই দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পালিয়ে যান গোটাবায়া রাজাপাকসে। পরে সেখান থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। সিঙ্গাপুর থেকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। গতকাল এনডিটিভি অনলাইন জানায়, শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়াকে ১৪ দিনের স্বল্পমেয়াদি 'ভিজিট পাস' দিয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটিতে প্রবেশের পরপরই অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, গোটাবায়া ব্যক্তিগত সফরে সেখানে গেছেন। গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে এক বিবৃতিতে সিঙ্গাপুরের ইমিগ্রেশন ও চেকপয়েন্ট কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরেও গোটাবায়ার বিরুদ্ধে সীমিত পরিসরে বিক্ষোভ হয়েছে। এর আগে মালদ্বীপে অবস্থানকালে বিক্ষোভের মুখে পড়েন গোটাবায়া। জল্পনা রয়েছে, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে আশ্রয় নিতে পারেন।
মন্তব্য করুন