ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী পদে বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ৪৭ বছরের লিজ ট্রাস। প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাককে হারিয়ে সোমবার তিনি রক্ষণশীলদের নেতা নির্বাচিত হন। নতুন প্রধানমন্ত্রী ট্রাসের সামনে রয়েছে পাহাড় সমান অন্তত পাঁচটি চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়া এবং মন্থর অর্থনীতির মতো বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া তিনি নাগরিকদের ওপর নতুন করে কর আরোপ করবেন না বলে যে কথা দিয়েছেন, সেটা রাখাও কঠিন হতে পারে। দলটিও এখন নানা ইস্যুতে বিভক্ত।

ভোটের হিসাবে বরিস জনসন বা তাঁর আগের প্রধানমন্ত্রীদের চেয়ে কম জনপ্রিয় ট্রাস। তিনি ভোট পেয়েছেন ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে বরিস ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে কনজারভেটিভ দলের নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে ডেভিড ক্যামেরন পেয়েছিলেন ৬৭ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। এ কারণে দলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর দিকেও তাঁকে নজর দিতে হবে।

গত জুলাইয়ে ব্রিটেনের মুদ্রাস্ম্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের ওপরে পৌঁছায়। জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জেরে বেড়ে যায় এ মুদ্রাস্ম্ফীতি। চলতি বছর ব্রিটেনের প্রত্যেক পরিবারের জ্বালানি খরচ গড়ে ৫৪ শতাংশ বেড়েছে; আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এটা কেবল পরিবারগুলোর জন্য খারাপ সংবাদ নিয়ে আসেনি, যুক্তরাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপরও বাজে প্রভাব ফেলেছে। অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ দিকে যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করতে পারে। বিষয়টি লিজ ট্রাসের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্রিটেনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। গবেষকরা বলছেন, তৃতীয় প্রান্তিক থেকেই মন্দার মুখ দেখা শুরু করতে পারে যুক্তরাজ্য। সোমবার এর ইঙ্গিত দিয়ে মার্কিন ডলারের তুলনায় ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম দশমিক ৩ শতাংশ কমে গেছে, যা ১৯৮৫ সালের পর সর্বনিম্ন।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সরকারি সেবা আগের তুলনায় সীমিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানায়, স্বাস্থ্যসেবায় ভোগান্তি বেড়েছে। মহামারি করোনার কারণে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা চাপের মুখে পড়েছিল। কর্মী ও তহবিল স্বল্পতার কারণে এটা হয়। একইভাবে কর্মী ও তহবিলের সমস্যা আছে সামাজিক নানা সেবার ক্ষেত্রগুলোও। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় সরকার এসব সমস্যায় ধুঁকছে।

এ বছর পরিবহন শ্রমিক, সাংবাদিক, আইনজীবী, অভিবাসী শ্রমিকদের ধর্মঘট দেখেছে ব্রিটেন। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর নেতারা দাবি-দাওয়া পূরণ না করার জন্য সরকারকে দুষেছেন। এসব ধর্মঘট নিশ্চিতভাবে যুক্তরাজ্যের উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলবে। ট্রাস তাঁর অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মধ্যে এগুলোর অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেছেন।

জটিল বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যেই দায়িত্ব নিয়েছেন ট্রাস। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন চলছে; চীনও তাইওয়ানকে হুমকি দিয়ে চলেছে। এর মধ্যে ব্রেক্সিটের প্রভাব তো রয়েছেই। ব্রেক্সিটের কারণে যেভাবে ব্রিটেন ভুগছে, তেমনি অন্য দেশগুলোতেও এর প্রভাব পড়ছে। এ পর্যায়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রাসকে আরও বেশি কূটনীতির পথে হাঁটতে হবে।

লিজ ট্রাসের জন্য উপরোক্ত সমস্যাগুলো ছাড়াও আরেকটি জটিল সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। সেটি হলো, নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। দলের এমপিদের মধ্যে নিজেকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে তাঁকে। ২০১০ সাল থেকে ১২ বছরে রক্ষণশীলরা পাঁচজনকে প্রধানমন্ত্রী করেছে। এ কারণে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার আগে ট্রাস দুই বছর টিকতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।