- আন্তর্জাতিক
- গোলাবর্ষণ নিয়ে মিয়ানমারের পক্ষে 'সাফাই' চীনা রাষ্ট্রদূতের
গোলাবর্ষণ নিয়ে মিয়ানমারের পক্ষে 'সাফাই' চীনা রাষ্ট্রদূতের

সীমান্তের ভেতরে মিয়ানমার থেকে আসা গোলা ও মর্টার শেল পড়ার ঘটনা চীনকে জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এ বৈঠকে নিজেদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে ঢাকা। কিন্তু বাংলাদেশকে সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না দিয়ে প্রকারান্তরে মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন রাষ্ট্রদূত। এ সময় চীন-মিয়ানমার সীমান্তে ইউনান প্রদেশের মধ্যে মিয়ানমারের গোলাবর্ষণের উদাহরণ দিয়েছেন তিনি। আর চীনে ছোড়া গোলাগুলি ছিল অনিচ্ছাকৃত বলেও জানিয়েছেন লি জিমিং।
গত মঙ্গলবার মিয়ানমার ও আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলো বাদে বাংলাদেশে থাকা সব বিদেশি মিশন ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিং করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন না ঢাকার চীন দূতাবাসের কোনো প্রতিনিধি। তাই গতকাল বৈঠক করেছেন লি জিমিং।
বৈঠক সূত্র জানায়, লি জিমিংয়ের কাছে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব। বৈঠকে মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ইতিহাসও তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। মিয়ানমার যে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তাও খণ্ডানো হয়। মিয়ানমার বলে আসছে, আরাকান আর্মির ছোড়া গোলা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জানিয়েছে, আরাকান আর্মির ছোড়া গোলা মিয়ানমারের অভ্যন্তরের দিকে যাবে। ভৌগোলিকভাবে আরাকান আর্মির গোলা কোনোভাবেই বাংলাদেশে এসে পড়ার কথা নয়। বৈঠকে সার্বভৌম ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। বিষয়টিতে একমত হয়েছেন চীনের রাষ্ট্রদূত।
নাম না প্রকাশের শর্তে বৈঠকে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত চীন-মিয়ানমার সীমান্তে ইউনান প্রদেশে মিয়ানমারের গোলাবর্ষণের উদাহরণ দিয়েছেন। ওই এলাকাতে বিদ্রোহীদের দমনের সময়ে মিয়ানমার থেকে একাধিকবার গোলা এসে চীনের অভ্যন্তরে পড়েছে। এতে করে বিদ্যালয় থেকে শুরু করে অনেক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। এগুলো ছিল অনিচ্ছাকৃত। কারণ মিয়ানমার ইচ্ছাকৃতভাবে চীনের দিকে কখনও গোলা ছুড়বে না।
তাহলে কি বাংলাদেশে এসে পড়া গোলা ও মর্টার শেলগুলো অনিচ্ছাকৃতভাবে পড়েছে বলতে চেয়েছেন চীনা রাষ্ট্রদূত? এর উত্তরে তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেননি। তিনি শুধু তাঁর দেশের সীমান্তের উদাহরণ দিয়েছেন।
বৈঠকে চীনা দূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিয়ানমারের গোলা ইচ্ছা করে আসুক আর অনিচ্ছাবশতই আসুক, তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ছে- যা উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আসছে। সীমান্তে এখনও সেনাবাহিনী মোতায়েন করেনি সরকার। তবে প্রয়োজন পড়লে সেটি করতে ঢাকা প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানানো হয়। তবে সুপ্রতিবেশী হিসেবে, বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান চায় ঢাকা।
বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি বেইজিংকে জানাবেন। সেই সঙ্গে ঢাকা থেকে মিয়ানমার নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদনও বেইজিংকে দেবেন তিনি। এ ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগের যেহেতু একটি পথ চীনের রয়েছে, সেটিও ব্যবহার করবে দেশটি।
এদিকে বৈঠক শেষে ঢাকার চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহিংসতা ও বাংলাদেশে গোলাবর্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, সীমান্তে যে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি ঘটেছে, সে বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন।
তবে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, যেদিন বাকি কূটনীতিকদের মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে অবহিত করা হয়েছিল, সেদিন চীনের ঢাকার দূতাবাসের কেউ ছিলেন না। তাই তাঁদের আলাদা করে অবহিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যাতে ত্বরান্বিত করা যায়, যেহেতু চীন এ বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থা নিচ্ছিল- এ বিষয়ে বৈঠকে তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ চীনকে জানিয়েছে সীমান্ত পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। তবে প্রত্যাবাসনটি যাতে শুরু হয়। প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু হওয়া নিয়ে আশ্বস্ত করেছে চীন। চীনের কথা মিয়ানমার কি শুনবে- এর উত্তরে খুরশেদ আলম বলেন, চীন বাংলাদেশের বন্ধু, বাংলাদেশের বার্তা যথাস্থানে পৌঁছে দেবে দেশটি।
মন্তব্য করুন