ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রতিমা বিসর্জনকালে পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে এক শিশু ও চার জন নারী রয়েছেন বলে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। আহত ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

গতকাল বুধবার পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজারের মাল নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এখনো পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ বুধবার শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। কিন্তু প্রতিমা বিসর্জনকালে হঠাৎ করে নেমে আসা পাহাড়ি ঢালে আটকা পড়েন অনেকে। এসময় বিসর্জনের গাড়িও নদীতে আটকে পড়ে। সে সময় ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮ জনে দাঁড়াল। 

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা মারা গেছেন তারা হলেন- তপন অধিকারী (৭২), ঊর্মি সাহা (১৩), রুমুর সাহা (৪২), আনস পণ্ডিত (৮), বিভা দেবী (২৮), শুভাশিস রাহা (৬৩), শোভনদ্বীপ অধিকারী (২০) ও সুস্মিতা পোদ্দার (২২)।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রবল পাহাড়ি ঢল এখনও অব্যাহত রয়েছে। তাই উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, লোকজন নদীর তীব্র স্রোত ঠেলে তীরে ফেরার চেষ্টা করছেন। অনেকে ভেসে যাচ্ছেন। কেউ কেউ কিছু একটা ধরে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন। 

গত বছর আগস্ট মাসে মধ্যরাতে আচমকা হরপা বানে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে মাল নদী। পানির স্রোতে বদলে যায় নদীর গতিপথ, ভেসে যায় প্রায় ৪০টি বাড়ি। এই ঘটনার স্মৃতি যখন টাটকা, ঠিক সেই সময় মাত্র ১৪ দিন আগে মাল নদীতে হরপা বানে ভেসে গিয়েছিল একটি ট্রাক। তারপর থেকে লাগাতার বৃষ্টি চলছে। ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল মাল নদী। তবু প্রতিমা বিসর্জনের সময় তেমন কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা প্রশাসন নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। 

ভারতের স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টার দিকে আচমকা রুদ্ররূপ ধারণ করে মাল নদী। পাহাড়ের উপর থেকে ধেয়ে আসে হরপা বান। সেই বানের তোড়ে ভেঙে যায় প্রশাসনের তৈরি করা বালির বাঁধ। এতে মুহূর্তে ভেসে যায় প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসা কয়েকটি গাড়ি ও কয়েকশ মানুষ। সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ও স্থানীয়রা তৎক্ষণাৎ উদ্ধারকাজ শুরু করেন। 

নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।

সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের অভিযোগ, ঘাটের নৌকা ছিল না। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও ছিল না। ছিল না সার্চলাইটর ব্যবস্থা। শুধুমাত্র দড়ির সাহায্যে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শুরু হয় উদ্ধারকাজ। নদীতে ৭৫ থেকে ৮০টির বেশি প্রতিমা বিসর্জনের কথা থাকলেও সেখানে উপস্থিত রাখা হয়েছিল মাত্র ৮ জন সিভিল ডিফেন্সের কর্মীকে। ফলে বারবার প্রশ্নের মুখে উঠে আসছে প্রশাসনিক ভূমিকা। 

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিমা বিসর্জনের আগে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে ভারী বৃষ্টিতে নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে তা করা যায়নি। 

সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের দাবি, রাত আটটা থেকে নদীতে ধীরে ধীরে পানি বাড়তে শুরু করলে বারবার সতর্ক করা হয়। নদী থেকে সাধারণ মানুষকে উঠে আসার নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা শোনেননি। এর পরেই ঘটে দুর্ঘটনা।  

এদিকে, বুধবার রাতে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একটি দল আহতদের দেখতে মাল হাসপাতালে পৌঁছালে সেখানে উত্তেজিত হয়ে পড়েন নিহতদের স্বজনরা। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সামনেই হাসপাতাল ভাঙচুর করেন তারা।