এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদ এস বেরনানকে, ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড এবং ফিলিপ এইচ ডিবভিগ। তাঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে- অর্থনীতিতে ব্যাংকের ভূমিকা, ব্যাংক ব্যবস্থার বিপর্যয় ও তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণ এবং অর্থনীতি ও সমাজে এর প্রভাব, সংকটাপন্ন ব্যাংক খাতের ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি প্রসঙ্গ।

এবারের অর্থনীতিতে তিন নোবেল বিজয়ীর গবেষণার আলোকে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতেও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তাঁর মতে, এবারের নোবেল পুরস্কার অনেক দেশের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় হুঁশিয়ারি বার্তা নিয়ে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার এক ফেসবুক পোস্টে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন তিনি।

অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ লিখেছেন, এ বছর আর্থিক খাতের বিশ্নেষণের ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য যে তিনজন অর্থনীতিবিদ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁরা সবাই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে ব্যাংক খাতের ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেছেন। তিনজনের বয়সই সত্তরের কাছাকাছি এবং এ বিষয়ে তাঁদের গবেষণার শুরু আশির দশকের প্রথম থেকে। শুধু উন্নত দেশের জন্যই নয়, স্বল্পোন্নত দেশের ব্যাংক খাতের ব্যবস্থাপনার নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রেও তাঁদের গবেষণা থেকে দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে।

তিনি আরও লিখেছেন, এর আগেও আর্থিক খাতের বিশ্নেষণের জন্য ১৯৯৭ সালে দু'জন এবং ২০১৩ সালে তিনজন অর্থনীতিবিদকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের সবারই গবেষণা ছিল শেয়ারবাজারের গতি-প্রকৃতি ও উত্থান-পতন নিয়ে। ওইসব বিশ্নেষণ শেয়ারবাজারের বিপর্যয় ঠেকাতে বা এ নিয়ে সঠিক পূর্বাভাস দিতে খুব কাজে দেয়নি বলে মনে করা হয়। কারণ, শেয়ারবাজারের কেনাবেচার ধরন শুধু অর্থনীতির যৌক্তিক আচরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, যে কারণে স্নায়ু-অর্থনীতি নামে নতুন ধারার অর্থনীতি নিয়ে এখন গবেষণা হচ্ছে।

তাঁর মতে, এবারের নোবেল বিজয়ীদের কাজ আর্থিক খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে এবং তাঁদের বিশ্নেষণ অনেক বেশি বাস্তবমুখী, যা ব্যাংক ব্যবস্থার সম্ভাব্য ধস ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তাঁরা যে বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্নেষণ করেছেন, তার মধ্যে আছে- ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি আমানতকারীর আস্থার সংকট, ঋণ মঞ্জুর করার ব্যাপারে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার গুরুত্ব, ব্যাংকের তারল্য ও মূলধন ঘাটতির বিষয়ে সতর্কতা, সংকটাপন্ন ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখতে আমানতের ওপর যথেষ্ট অঙ্কের বীমার ব্যবস্থা এবং যথাসময়ে সতর্ক না হওয়ার খেসারত হিসেবে পরবর্তী সময়ে দেউলিয়া ব্যাংককে বাঁচাতে সরকারের বড় অঙ্কের ব্যয়ের বোঝা বহন।

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জন্য এসব বিষয়েই সতর্কতা জরুরি। যতদূর মনে পড়ে, এ দেশের ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত আমানতপ্রতি মাত্র এক লাখ টাকা বীমাকৃত। এরই মধ্যে ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়া থেকে উদ্ধার করার ঘটনা দেখা গেছে। অনেক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার দক্ষতার ঘাটতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে ও হচ্ছে; কিন্তু অবস্থার খুব উন্নতি হচ্ছে বলা যাবে না। ব্যাংকে টাকা আমানত রাখার তেমন কোনো বিকল্প নেই বলে ব্যাংক খাতের সমস্যা সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না। কিন্তু যখন কোনো বিপর্যয় ঘটে, তখন তার জন্য পুরো অর্থনীতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়। এবারের নোবেল পুরস্কার অনেক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য হুঁশিয়ারি বার্তা বহন করে এনেছে।