- আন্তর্জাতিক
- বিষমুক্ত বাতাস
বিষমুক্ত বাতাস

ঘরের বাতাসে মিশে থাকে বিষাক্ত গ্যাস। এসব গ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এমনকি শিশুদের জন্যও বিপজ্জনক। ঘরের বাতাসকে বিষমুক্ত রাখতে বারান্দা কিংবা অন্দরে লাগাতে পারেন কিছু গাছ। বাতাস বিশুদ্ধকারী কিছু গাছ নিয়ে লিখেছেন ইসরাত জাহান
করোনাকালে মানুষ যখন ঘরবন্দি ছিল, তখন সারা পৃথিবীতে পরিবেশদূষণ কমে গিয়েছিল। বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস, ধুলাবালির পরিমাণও কমে গিয়েছিল তখন। আবার শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। রোজ ছুটে চলা। বাতাসে বাড়ছে বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ। সার্বিকভাবে পরিবেশদূষণ বাড়ছে। কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) রিপোর্ট অনুসারে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার নাম উঠে এসেছে আবার। বাইরের সবটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও, ঘরের ভেতরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে পারেন। এমন কিছু গাছ রয়েছে, যেগুলো লাগালে বাতাসে বিশুদ্ধতার পরিমাণ বাড়বে। নাসার 'ক্লিন এয়ার স্টাডি' অনুসারে, 'কিছু সাধারণ ইনডোর প্ল্যান্ট বিষাক্ত গ্যাস যেমন- ফর্মাল ডিহাইড, বেনজিন বা অ্যামোনিয়া শোষণ করে ঘরের বাতাসকে প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ করে।'
অ্যালোভেরা : এই গাছ কমবেশি সবার বাসায় পাওয়া যায়। এটি বাতাস বিশুদ্ধকারী প্ল্যান্ট। রান্নাঘরে উচ্চ তাপমাত্রা থাকে। এই তাপমাত্রা কমাতে অ্যালোভেরা প্ল্যান্ট ৯০ শতাংশ ফর্মাল ডিহাইড ও বেনজিন দূর করে বাতাসকে বিশুদ্ধ করে। এ ছাড়াও বাতাসের বিষাক্ত ধূলিকণা নির্মূল করে বাতাসের গুণগত মান নিশ্চিত করে।
তুলসী :ঔষধি গাছ হিসেবে মূলত তুলসী গাছ বেশ জনপ্রিয়। গাছটি সামান্য সূর্যের আলোতেই বেড়ে উঠতে পারে। এটি মশা, পোকামাকড় দূর করে এবং বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া এটি বাতাস থেকে অনেক ক্ষতিকারক রাসায়নিক ও ব্যাকটেরিয়া পরিস্কার করে।
স্পাইডার প্ল্যান্ট :এটি বায়ু বিশোধকের মতো কাজ করে। এ উদ্ভিদ বাতাস থেকে জাইলিন, বেনজিন, ফর্মাল ডিহাইড এবং কার্বন-মনোক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক উপাদান ফিল্টার করে। এই গাছের পেছনে বেশি সময় দিতে হয় না। পরিচর্যার জন্যও বেশি কষ্ট করার প্রয়োজন পড়ে না। গোড়ার মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হয়। সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখতে হয়।
এরিকা পাম :এ গাছের পাতা দেখতে কিছুটা পাম গাছের পাতার মতো। যাদের সাইনাসের সমস্যা আছে, শীতের সময়টা তাঁদের জন্য বেশ কষ্টদায়ক। এই গাছটি প্রাকৃতিক হিউমিডিফায়ার হিসেবে কাজ করে। তাই শোবার ঘরে গাছটি থাকলে কিছুটা আরামেই ঘুমাতে পারবেন। তবে আকারে মোটামুটি বড় হওয়ায় গাছটি লাগাতে রুমে কিছুটা বাড়তি জায়গার দরকার পড়বে।
মানিপ্লান্ট :ঘরোয়াভাবে মানিপ্লান্ট বেশ জনপ্রিয়। যে কোনো পরিবেশে বেঁচে থাকার অদ্ভুত ক্ষমতা রাখে। আলো ছাড়াও বেঁচে থাকতে পারে। তেমন কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না। ঘরের যে কোনো কোনায় এই লতানো গাছটি দূষণ শোষণ করে বাতাসকে বাসযোগ্য করে রাখে। এটি বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মাল ডিহাইড, জাইলিন শোষণ করে।
রাবার প্লান্ট :এটি একটি জনপ্রিয় হাউস প্লান্ট। কারণ এতে আছে মোমের প্রলেপযুক্ত পাতা। রাবার গাছ ছয় থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। যে কোনো জায়গায় বৃদ্ধি পায় এ গাছ।
ইংলিশ আইভি :যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে না, এমন জায়গায় রাখতে হয় গাছটি। জানালার কার্নিশ হতে পারে আপনার ইংলিশ আইভি লাগানোর উপযুক্ত জায়গা। একটি কাটিং লাগালেই তা থেকে ধীরে ধীরে গাছ গজিয়ে যায়। অ্যালার্জি বা অ্যাজমার সমস্যা থাকলে তাঁদের জন্য এর চেয়ে ভালো ইনডোর প্লান্ট আর হয় না। এ কারণে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে গাছটির জনপ্রিয়তা সবখানেই। তবে সতর্ক হওয়ারও ব্যাপার আছে। গাছটির পাতা পোষা প্রাণীদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে।
স্নেক প্লান্ট :এটি খুবই জনপ্রিয় ইনডোর প্লান্ট। অনেকের বাসায় এটি পাওয়া যায়। মৃদু আলো আর কিছুটা উষ্ণ তাপমাত্রায় বেড়ে ওঠে স্নেক প্লান্ট। বাতাসের বিষাক্ত বস্তুকণা আর কার্বন-ডাইঅক্সাইড দূর করে বাতাস বিশুদ্ধ রাখে গাছটি। অনেক সময় স্নেক প্লান্ট বাতাসে আর্দ্রতা নিঃসরণ করে অ্যালার্জিবাহী কণাকে হ্রাস করে। এই গাছ সিক বিল্ডিং সিন্ড্রোমের জন্য দায়ী বিষাক্ত উপাদানগুলো ফিল্টার করে বায়ু বিশোধক হিসেবে কাজ করে।
পিস লিলি :এটি চমৎকার একটি বায়ু পরিশোধক গাছ। অল্প আলোতেই এ গাছ বেড়ে ওঠে। এর হলুদ পাতা বুঝিয়ে দেবে, সে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রোদ পাচ্ছে। মাঝারি থেকে মৃদু আলোতেই বাঁচতে পারে পিস লিলি। স্বাভাবিক পরিমাণে পানি দিলেই যথেষ্ট। তবে এ গাছটির বেশ যত্ন নিতে হয়, যা অনেকের কাছেই বেশ কঠিন মনে হতে পারে। ঘরের বাতাস থেকে বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মাল ডিহাইড, জাইলিন শোষণ করে। এতে গ্রীষ্ফ্মে ফুটবে খুব চমৎকার সাদা ফুল। তবে বিড়াল, কুকুর আর বাচ্চাদের কাছ থেকে দূরে রাখুন এ গাছ। কারণ গলায় বা পেটে এটির কিছু অংশ গেলে চুলকাবে।
পাম গাছ :নামটা শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এটি খুব কার্যকরী গাছ। বাতাস থেকে ফর্মাল ডিহাইড পরিশোধন করে এ গাছ। প্রচুর পরিমাণ বাতাস পরিশোধন করতে পারে। বাঁশ পাম গাছ বাতাস থেকে ফর্মাল ডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন নামক বিষ দূষণমুক্ত করে। এটি দেখতে ছোট নারকেল গাছের মতো। আসবাবের পাশে ছায়াযুক্ত জায়গায় রেখে দিন এটি। আসবাব থেকে নির্গত দূষণ শুষে নেবে। খুব বেশি পানি দিলে শিকড় পচে যেতে পারে। এ ছাড়াও পানি যেন জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মন্তব্য করুন