- আন্তর্জাতিক
- কেমন মানুষ ব্রিটেনের নতুন ফার্স্ট লেডি
কেমন মানুষ ব্রিটেনের নতুন ফার্স্ট লেডি

স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি ও দুই মেয়ের সঙ্গে ঋষি সুনাক-বিবিসি
ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের স্ত্রী ফার্স্ট লেডি অক্ষতা মূর্তির ব্যক্তিগত জীবনও এখন বহুল আলোচিত। ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনীর এই কন্যা তিনটি মহাদেশে জীবন কাটিয়েছেন। তিনি নিজেও এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। তবে ঘনিষ্ঠজন বলছেন, তিনি সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত এবং নিরহংকার।
সুনাকের নির্বাচনী এলাকা উত্তর ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ডে কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য পিটার ওয়াকার বলছিলেন, অক্ষতা সবার সঙ্গেই মেলামেশা করেন। বিশেষ সুবিধাভোগী জীবন থাকা সত্ত্বেও তাঁর কোনো দাম্ভিকতা নেই। এই দম্পতি যে এত সম্পদশালী, সে সম্পর্কে দীর্ঘদিন তাঁর কোনো ধারণাই ছিল না। খবর বিবিসির
ওয়াকার বলেন, 'আমি আক্ষরিক অর্থেই খবর দেখে তাঁদের এত সম্পদ সম্পর্কে জেনেছি।' বাবার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ইনফোসিসে অক্ষতার শেয়ারের মূল্য আনুমানিক ৭০ কোটি পাউন্ড। তবে এ বছরের শুরুর দিকে সুনাক যুক্তরাজ্যের চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অক্ষতার ব্যবসায়িক স্বার্থ সংবাদপত্রের শিরোনাম এবং রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছিল। মস্কো ইউক্রেনে হামলার পরও কোম্পানিটি রাশিয়ায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় সমালোচিত হয়।
তার কিছুদিন পর প্রকাশ পায়, অক্ষতা ব্রিটেনে অস্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাস করেন। এর মানে হলো, তাঁকে যুক্তরাজ্যের বাইরে থেকে আয় করা অর্থের ওপর কোনো কর দিতে হবে না। কোম্পানিটি পরে রাশিয়া থেকে তাদের কার্যক্রম প্রত্যাহার করে নেয় এবং অক্ষতা তাঁর সব ধরনের আয়ের ওপর যুক্তরাজ্যে কর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
তবে এই বিতর্ক ভারতে অনেককে অবাক করেছে। কারণ, সেখানে পরিবারটি তাদের সাদামাটা জীবনধারা ধরে রাখার জন্য সুপরিচিত। এই পরিবারের ঘনিষ্ঠ ভারতের মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ সুহেল শেঠ বলেন, তাঁদের আচরণ এবং যেভাবে তাঁরা জীবনযাপন করেন, তা অনেক সাধারণ। এটি যেন তাঁদের ডিএনএতেই রয়েছে।
ইনফোসিস কোম্পানিটি ধীরে ধীরে একটি 'আউটসোর্সিং জায়ান্ট'-এ পরিণত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৫০টি দেশে তিন লাখের বেশি কর্মী এই কোম্পানিতে কাজ করেন। যুক্তরাজ্যসহ সারাবিশ্বের নানা কোম্পানি ও সরকারি সংস্থার জন্য আইটি সেবা দেওয়ার বহু লাভজনক চুক্তি করেছে তাঁর কোম্পানি। এই কোম্পানির সাফল্য অক্ষতার বাবা এন আর নারায়ণ মূর্তিকে ভারতের অন্যতম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। কিন্তু তাঁর সমর্থকরা বলেন, তিনি বিলাসী অভিজাতদের অংশ হতে চাননি। ৭৬ বছর বয়সী নারায়ণ মূর্তি এখন অবসর জীবনযাপন করছেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, একটি বহুজাতিক কোম্পানির নেতৃত্ব দেওয়ার সময়ও নিজেই নিজের টয়লেট পরিস্কার করে গেছেন। তিনি বলেন, তাঁর সন্তানদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করার এই ধারা তিনি অব্যাহত রেখেছেন। অক্ষতাকে ২০১৩ সালে এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, নাতনিদের সাধারণ জীবন ও কৃচ্ছ্রের গুরুত্ব সম্পর্কে শেখাতে হবে।
পরিচিতজন অক্ষতাকে কোমলমতি ও উদার মনোভাবের ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াশোনা করেন। সুনাকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের শুরু সানফ্রান্সিসকোর কাছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এ জুটি ১৬ বছর আগে স্নাতক পাস করেছেন। কিন্তু স্ট্যানফোর্ডের সঙ্গে তাঁরা সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। সেখানে তাঁরা সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ফেলোশিপে অর্থায়ন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছেন।
এই দম্পতি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সেখানে ভর্তির দায়িত্বে ছিলেন ডেরিক বোল্টন। তিনি বলেছেন, ছাত্র থাকাকালে যেমন ছিল তারা, সেই সুন্দর দুই মানুষই রয়ে গেছে। তারা খোলামেলা মনের, সদয়, নম্র এবং অসাধারণ বিনয়ী।
২০০৯ সালে তাঁরা অক্ষতার আদি শহর বেঙ্গালুরুতে বিয়ে করেন। পরে নিউইয়র্কে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ডেরিক বোল্টন। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, 'আমার মনে আছে, অক্ষতা ঘরের মধ্যে হাঁটছিল এবং তাকে খুবই সুন্দর লাগছিল। সেই ঘরে সেদিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন এবং আমি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নই। তারপরও অক্ষতা আমার কাছে এসেছিল শুভেচ্ছা বিনিময় করতে এবং আমাকে এটা জানাতে, আমি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় তারা কতটা খুশি।'
২০১৫ সালে সুনাক উত্তর ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ডের এমপি নির্বাচিত হন। ভোটের কয়েক সপ্তাহ আগে কোম্পানিতে তাঁর শেয়ার স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। এই দম্পতি সানডে টাইমসের ২০২২ সালের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন। এতে তাঁদের আনুমানিক সম্পদ ৭৩ কোটি পাউন্ড (প্রায় ৬০০ কোটি টাকা) বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির এই সংকট সুনাক ঠিক সেভাবে অনুধাবন করতে পারেন কিনা- সে রকম প্রশ্ন উঠেছে। এই দম্পতির জীবনধারা বেশ নিয়মিতই সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। গত জুলাই মাসে সুনাক চ্যান্সেলর পদ থেকে পদত্যাগ করার পরদিন অক্ষতা তাঁদের লন্ডনের বাড়ির বাইরে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের চা-বিস্কুট পরিবেশন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর আতিথেয়তা প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। টুইটার ব্যবহারকারীরা অনেকেই লিখেছিলেন, যে ডিজাইনার মগে চা পরিবেশন করা হয়, তার প্রতিটির দাম ৩০ পাউন্ডের বেশি। একজন লিখেছিলেন, এই মগের দাম দিয়ে একটি পরিবারের দুই দিনের খাওয়ার খরচ চলে যায়।
মন্তব্য করুন