সাগরতলে রহস্যময় জগতে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। কৌতূহলী এমন মানুষের ইচ্ছা পূরণের দিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়। চাইলেই গভীর সাগরে গিয়ে দেখে আসা যাবে টাইটানিক কিংবা ইতিহাসখ্যাত আরও জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। এমনই এক উচ্চাভিলাষী প্রকল্প 'মিশন স্পেশালিস্ট'। মহাকাশে যেমন নভোচারী বা পর্যটকরা যান, এটি হবে তেমনি এক ভ্রমণ।

এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক ওশানগেট কোম্পানির মালিক স্টকটন রাশ। তিনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ গত বছর দেখে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে ছিল বিজ্ঞানী ও পর্যটকের একটি দল। কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের সেন্ট জোনস শহর থেকে ৪০০ মাইল উত্তরে আটলান্টিক মহাসাগরের তলে রয়েছে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। খবর  বিবিসির

রাশ বলেন, 'আমরা যখন সমুদ্রতলে পৌঁছি, তখন চোখের সামনে ১৫ স্কয়ার মিটারজুড়ে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ। খণ্ড-বিখণ্ড অংশগুলো পানির সঙ্গে দুলছে। ডুবোজাহাজ থেকে তা গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছি আর মনে মনে হিসাব কষছি, 'এমন একটি সময় আসবে, যখন লোকজন কম খরচে এবং নিয়মিতভাবে মহাকাশ ভ্রমণে যাবে। সমুদ্রতলের জগতেও একই রকম ঘটতে চলেছে।'

স্টকটন রাশের পরিকল্পনা, মহাকাশের জন্য ইলন মাস্ক, রিচার্ড ব্রানসন কিংবা জেফ বেজোসরা যা করছেন, সমুদ্রজগতে ভ্রমণের জন্য তিনি তেমনটি করবেন। অর্থ খরচ করে কেউ সমুদ্রজগৎ দেখতে চাইলে তিনি তাঁদের সে ইচ্ছা পূরণ করবেন। এমনকি সমুদ্রতল পরিভ্রমণের আগে পর্যটকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করবে তাঁর কোম্পানি।

১৯১২ সালের এপ্রিলে প্রথম সমুদ্রযাত্রায় আটলান্টিক মহাসাগরে হিমশৈলের আঘাতে ডুবে গিয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ 'টাইটানিক'। বর্তমানে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে সমুদ্রের ৩৮০০ মিটার তলে।

স্টকটন রাশ গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান ও ভ্রমণ বাণিজ্যিকভাবে সফল করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। তিনি বলেন, 'ইংরেজি ভাষায় একটি নিবন্ধ পড়েছিলাম। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, তিনটি শব্দ আছে যা সারা পৃথিবীতে পরিচিত। সেগুলো হলো কোকা-কোলা, গড ও টাইটানিক।'

টাইটানিক দেখার নতুন মিশন বাস্তবায়নে রাশকে হালকা ও অত্যাধুনিক একটি ডুবোযান তৈরি করতে হয়েছে। এই যানে করে পাঁচজন পর্যটক গভীর সমুদ্রে যেতে পারবেন। তাঁর এই চিন্তা বাস্তবায়নের আগে অনেকেই বলেছিলেন, এটা সম্ভব হবে না।

রাশ ও তাঁর সঙ্গীরা খুব কাছ থেকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ প্রত্যক্ষ করেন। তাঁদের দলে ছিলেন ক্রু, ওশানগেটের কর্মকর্তা, সমুদ্রবিজ্ঞানী এবং পর্যটক। ওই পর্যটকরা প্রত্যেকে ভ্রমণ খরচ হিসেবে ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড (৩ কোটির বেশি টাকা) ব্যয় করেন। রাশের ডুবোযানে ভ্রমণ করেছিলেন ব্যাংকার রেনাটা রোজাস, ব্যবসায়ী ওসিন ফ্যানিং এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব জ্যাডেন প্লান, সমুদ্রবিজ্ঞানী স্টিভ রস এবং পাইলট স্টট গ্রিফিথ।

যাঁরা সমুদ্রতল ভ্রমণে যাবেন, তাঁরা জীববৈচিত্র্যের ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করার সুযোগ পাবেন। রাশ ও তাঁর দল টাইটানিক দেখতে গিয়ে ধ্বংসাবশেষের চারপাশের পানির নমুনা সংগ্রহ ও ক্যামেরা ব্যবহার করে সেখানকার জীববৈচিত্র্যের ভিডিও করেন। রাশ বলেন, গভীর সমুদ্র সম্পর্কে মানুষের জানাশোনা খুবই কম। বিশাল মহাসাগরের পরিবেশের ব্যাপারে খুব কমই গবেষণা হয়েছে। রাশের ডুবোজাহাজটি সমুদ্র তলদেশে দুই ঘণ্টারও বেশি অবস্থান করে। এ সময় তিনি জানালা দিয়ে জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করেন।

রাশ জানান, গভীর সমুদ্রে যাওয়ার সময় মেসোপ্লাজিক স্তর (পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট) অতিক্রম করার পর দেখা গেল, মুহূর্তে বহু প্রাণী ওপরের স্তরে উঠে আসছে এবং পরে তারা ৫০০ থেকে ১০০০ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। বহু প্রাণী দেখা যায়, যেগুলো এখানে-সেখানে আলোর ঝলকানি দিচ্ছে।