যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি আধাপাকা বাড়ি। উঠানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানা জিনিসপত্র। সেই বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন বেশ কয়েকজন রুশ সেনা। আত্মসমর্পণ করতে বলা হয় তাঁদের। এক পর্যায়ে তাঁদের পাকড়াও করে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এরপর রুশ সেনারা হাত উঁচু করে আত্মসমর্পণ করে ঘরের বাইরে উঠানে সারিবদ্ধভাবে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে থাকেন। অন্তত ১০ জন আত্মসমর্পণের পর ১১তম রুশ সেনা ঘর থেকে বেরিয়েই আচমকা গুলি ছুড়তে থাকেন ইউক্রেনীয় বাহিনীর দিকে। তাৎক্ষণিক পাল্টা গুলি ছোড়ে কিয়েভ বাহিনী। তীব্র গোলাগুলির শব্দে প্রকম্পিত হয় চারপাশ। এরপর সেখানে কী ঘটেছে, তা পরিস্কার নয়।
এ দৃশ্য কয়েক দিন আগে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর। গোলাগুলি শুরুর পর ভিডিওটির ধারণ বন্ধ হয়ে যায়। শুধু এই একটি ভিডিওই নয়, আরও কয়েকটি ভিডিও যাচাই করেছে নিউইয়র্ক টাইমস।
ভিডিওগুলো প্রকাশ হওয়ার পর ইউক্রেনীয় বহিনী যুদ্ধাপরাধ করেছে নাকি আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি ছুড়েছে- এখন সেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিশ্নেষকরা বলছেন, শুধু এসব ভিডিওর ভিত্তিতেই নয়, আসলে কী ঘটেছে তা তদন্ত ছাড়া কোনো পক্ষকেই যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত করা যাবে না। আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো হলে তা যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য হবে না। নভেম্বরের মাঝামাঝি ইউক্রেনীয় বাহিনী লুহানস্ক অঞ্চলের মাকিভকা গ্রাম পুনরুদ্ধারের সময় এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। ভিডিওগুলো উপগ্রহ চিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছে নিউইয়র্ক টাইমস।
আরেকটি ভিডিওতে এ ঘটনার রক্তাক্ত পরিস্থিতি দেখা যায়। রুশ সেনারা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। মনে হচ্ছে তাঁরা মৃত। বেশিরভাগকে দেখা গেছে- তাঁরা যে জায়গায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন, সেখানেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছেন। রক্ত বয়ে যাওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়। আত্মসমর্পণের আগে ও পরে তাঁদের পোশাকেরও মিল রয়েছে।
ভিডিওগুলো প্রথমে ইউক্রেনীয় সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। সেখানে ইউক্রেনীয় সেনাদের শক্তির প্রশংসা ও রুশ বাহিনীর হাত থেকে বিভিন্ন এলাকা পুনরুদ্ধারে সেনাদের বীরত্ব তুলে ধরা হয়। এসব ভিডিওর বিষয়ে অবশ্য রাশিয়ার যুদ্ধপন্থি অনেকেই আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। রুশ মানবাধিকার পরিষদ বলছে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে ভিডিও পাঠাবে তারা। দেশটির তদন্ত কমিটিও তা খতিয়ে দেখছে। ইউক্রেনের মানবাধিকার কমিশনার অবশ্য দাবি করেছেন, আত্মসমর্পণের সময় রুশ সেনারা গুলি চালিয়েছিল। সে সময় আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয় ইউক্রেনীয় বাহিনী।
জাতিসংঘ বলেছে, ঘটনার তদন্ত করা উচিত। হিউম্যান রাইটস অফিসের মুখপাত্র বলেন, তাঁরা ভিডিওগুলো খতিয়ে দেখছেন। আত্মসমর্পণের পর কিংবা নিরস্ত্র অবস্থায় কাউকে গুলি করে হত্যা করা আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ।