
নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভরত বিজেপির সমর্থকরা। ছবি-সংগৃহীত
নতুন উত্তেজনা দেখা দিয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মাঝে। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে গত বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জড়ান বাগ্যুদ্ধে। সেই উত্তাপ পরে ছড়ায় অধিবেশনের বাইরে। ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়ায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানকে 'সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র' বলে আখ্যা দেন। এতে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর জবাব গড়ায় ব্যক্তিগত আক্রমণে। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে 'গুজরাটের কসাই' বলে অভিহিত করেন। তাঁর এই বক্তব্যকে চরম অসভ্য উল্লেখ করে শুক্রবার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমর্থকরা। খবর আলজাজিরা, এনডিটিভি ও ডনের।
গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন করে নয়াদিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটিতে ভারতের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত অবৈধ এবং একতরফা বলেও দাবি করেন তিনি। গত বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে কাশ্মীর ইস্যু ও সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো। তিনি বলেন, বহুত্ববাদের ফল পেতে চাইলে কাশ্মীর ইস্যুতে জাতিসংঘের পাসকৃত প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সংস্থাটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিও জানান তিনি। তাঁর বক্তব্যের জবাবে ভারত বহুত্ববাদে বিশ্বাসী উল্লেখ করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, যারা আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মতো সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়, তাদের মুখে নীতি কথা মানায় না।
এরপর বৈঠকের বাইরে জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, "পাকিস্তান 'সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল'। আমার পরামর্শ, আপনারা ভালো প্রতিবেশী হওয়ার চেষ্টা করুন।" তিনি আরও বলেন, মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন পাকিস্তান সফরের সময় বলেছিলেন, 'আপনি যদি আপনার বাড়ির পেছনের উঠানে সাপ রাখেন, সেটি যে শুধু আপনার প্রতিবেশীকে কামড়াবে- এমনটা নয়; আপনাদেরও কামড়াবে।'
তাঁর এমন কথার জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, জয়শঙ্করের মনে রাখা উচিত ওসামা বিন লাদেন মারা গেছেন কিন্তু গুজরাটের কসাই বেঁচে আছেন এবং তিনি এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, পাকিস্তানি কিংবা ভারতীয় মুসলমান যা-ই হোক না কেন, ভারত সবসময় সন্ত্রাসবাদকে ইসলামের সঙ্গে মিলিয়ে বলে। সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম নেই, কোনো সীমানা নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০০২ সালে ধর্মীয় দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মানুষ নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই মুসলমান। এসব ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর তা প্রত্যাহার করা হয়। এদিকে মোদিকে নিয়ে করা মন্তব্য চরম অসভ্য বলে অভিহিত করেছে ভারত। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে ভুট্টো-জারদারির বংশধরকে। শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের সন্ত্রাস ছড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। নিউইয়র্ক, মুম্বাই, পুলওয়ামা, পাঠানকোট ও লন্ডনের মতো শহর এখনও পাকিস্তান সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের দাগ বহন করছে। এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত দেশটির দূতাবাসের সামনে শুক্রবার বিক্ষোভ করেছেন বিজেপির নেতাকর্মীরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের থামাতে সড়কে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। বিক্ষোভে পাকিস্তানবিরোধী নানা স্লোগান দেন তাঁরা।
মন্তব্য করুন