সরকার গঠন নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা
পাকিস্তানে নির্বাচন

.
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০০:৩৫
পাকিস্তানে নতুন সরকার গঠন নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের চার দিন পরও কোন দল সরকার গঠন করবে এবং প্রধানমন্ত্রীইবা কে হবেন– তা জানতে পারছেন না দেশটির নাগরিকরা।
নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও তৃতীয় স্থান পাওয়া পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) সরকার গঠনে পরস্পরকে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তবে সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন– তা নিয়ে এখনও সমঝোতা হয়নি।
নিজ নিজ দল থেকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানাচ্ছে দুই দলই। এ সমস্যা সমাধানে ক্ষমতা ভাগাভাগির আওতায় পালাক্রমে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনা ভেবে দেখছে পিএমএল-এন ও পিপিপি।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফও (পিটিআই) সরকার গঠনের আশা ছাড়েনি। দলটির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া অর্ধশতাধিক আসনে তাদের প্রার্থীদের কারচুপির মাধ্যমে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে নেতারা অভিযোগ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে আদালতের মাধ্যমে সেসব আসন পুনরুদ্ধার করে সরকার গঠনের চেষ্টা করছে দলটি।
গত সপ্তাহের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির প্রতিবাদে গতকাল সোমবার দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানে দিনব্যাপী ধর্মঘট পালন করেছে কারাবন্দি ইমরান খানের হাজার হাজার সমর্থক। তারা প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে। এতে সহিংস প্রতিবাদের সম্ভাবনা রয়েছে এবং শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ইমরান সমর্থকদের ওপর ক্র্যাকডাউন চালাতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পিএমএল-এন ও পিপিপির মধ্যে জোট সরকার হলে তা অস্থিতিশীল হতে পারে। এতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ সামরিক বাহিনীর হাতে থাকতে পারে।
পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক আয়েশা জালাল বলেছেন, ফেডারেল পর্যায়ে জোট সরকার অনিবার্য এবং এখানেই ব্যাপারটা জটিল হয়ে গেছে। তিনি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, পাকিস্তান এখন একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে প্রবেশ করছে, যা কার্যত নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক সংকট। পাকিস্তানের রাজনীতিতে জোট অস্বাভাবিক নয়, তবে তাদের পরিচালনা করা সহজ নয়। তারা অবাধ্য, দুর্বল এবং কারসাজিপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, এ ধরনের সরকারের পক্ষে দেশকে এগিয়ে নেওয়া এবং অর্থনীতির গভীর কাঠামোগত সমস্যা সমাধানে যে ধরনের সাহসী অর্থনৈতিক সংস্কার দরকার, তা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। এ ধরনের দুর্বল সরকার সেনাবাহিনীর হাতের পুতুল হবে।
অন্যদিকে ইমরানের সরকার গঠনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা সেনাবাহিনী। জেনারেলরা ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে এবং প্রধানমন্ত্রী পদে তাঁর প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পাকিস্তানের রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ফারজানা শেখ আলজাজিরাকে বলেছেন, ইমরান খান ও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের একে অন্যের প্রতি বিতৃষ্ণা এখন বেশ প্রতিষ্ঠিত। তাই ইমরান ও সেনাবাহিনীর পুনর্মিলন খুব কঠিন হবে।
পিএমএল-এন ও পিপিপির বৈঠক
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনী দিনের পর থেকে তিন সপ্তাহ বা ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকার গঠন করতে হবে।
পাকিস্তানের জিও নিউজ জানায়, ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর ক্ষমতা ভাগাভাগির ফর্মুলা নিয়ে রোববার বৈঠক করে পিএমএল-এন ও পিপিপি। তাতে জোট সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদের প্রথম তিন বছর সময়ের জন্য পিএমএল-এন এবং পিপিপি বাকি সময়ের জন্য তাদের দল থেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবে– এমন সম্ভাবনা নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করেছে।
এর আগে ২০১৩ সালে বেলুচিস্তানে পিএমএল-এন এবং ন্যাশনাল পার্টি (এনপি) মিলে প্রথম ক্ষমতা ভাগাভাগি ফর্মুলার মাধ্যমে সরকার গঠন করেছিল। তখন দুই দলের দুই মুখ্যমন্ত্রী পাঁচ বছর মেয়াদের অর্ধেক সময়ের জন্য পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন।
রোববার লাহোরের বিলাওয়াল হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পিপিপির সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, দলের চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এবং পিএমএল-এনের নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পিএমএল-এন আনুষ্ঠানিকভাবে পিপিপিকে জোট সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয়।
পিএমএল-এন নেতারা প্রধানমন্ত্রীর পদ তাদের দখলে রাখার দাবি জানালে পিপিপির আসিফ আলি জারদারি বলেন, তাদের দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ইতোমধ্যে বিলাওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনীত করেছে। এরপরই দুই দলের নেতারা পালাক্রমে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় বসানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। এ বিষয়টিতে এখনও সুরাহা না হলেও দলগুলো কেন্দ্র, পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানে জোট সরকার গঠনে সম্মত হয়েছে।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে ৩৩৬টি আসন রয়েছে, যার মধ্যে ২৬৬টিতে সরাসরি ভোট নেওয়া হয়। বাকি ৭০টি সংরক্ষিত (৬০টি মহিলাদের জন্য ও ১০টি অমুসলিমদের জন্য)। এগুলো জাতীয় পরিষদে বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত আসনের বিপরীতে আনুপাতিক হারে বরাদ্দ করা হয়।
কারচুপির অভিযোগ এনে আসন ছেড়ে দিলেন বিজয়ী প্রার্থী
জামায়াতে ইসলামীর নেতা হাফিজ নাঈম উর রহমান বলেছেন, করাচিতে প্রাদেশিক বিধানসভায় তাঁকে কারচুপি করে জেতানো হয়েছে। এ কারণে আসন ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। ৮ তারিখের নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পিটিআই-সমর্থিত প্রতিপক্ষ আসলে এই আসনে জয়ী হয়েছেন। পরে এক্সে একটি পোস্টে পিটিআই তাঁর প্রশংসা করে বলেছে, অন্য প্রার্থীদের কাছ থেকেও একই ধরনের সততা আশা করে তারা।
দুই দলের প্রধানের পদত্যাগ
নির্বাচনে দলের ব্যর্থতার দায় নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির সিরাজুল হক এবং ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তানের প্রধান জাহাঙ্গীর তারিন পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এক্সে এক পোস্টে সিরাজুল বলেছেন, তিনি ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে পরাজয়ের দায় স্বীকার করে নিচ্ছেন।