ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাজ্যের দরজা বন্ধ হলো ‘আইএস বধূ’ শামীমার

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া কঠিন হলেও তিনি নিজেই তাঁর দুর্ভাগ্যের ভিত্তি রচনা করেছেন পর্যবেক্ষণে আদালত

যুক্তরাজ্যের দরজা বন্ধ হলো ‘আইএস বধূ’ শামীমার

শামীমা

 সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০১:১১

জঙ্গি সংগঠন আইএস বা ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিলেন শামীমা বেগম। তিনি আর নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না। গতকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্যের আদালত নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়া নিয়ে শামীমার আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। এর অর্থ হলো, তিনি ব্রিটেনের নাগরিক নন। খবর বিবিসির।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যে। আট বছর আগে পালিয়ে সিরিয়ায় আইএসের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে ব্রিটিশ সরকার। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত অক্টোবরে লন্ডনের আপিল আদালতে মামলা করেন শামীমা। ওই মামলার রায়ে আদালত বলেন, আইনগতভাবেই শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করেছিল ব্রিটিশ সরকার। বর্তমানে সিরিয়ায় বসবাসরত শামীমার যুক্তরাজ্যে ফেরার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। মামলার পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি বলেন, শামীমার মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া কঠিন হলেও তিনি নিজেই তাঁর দুর্ভাগ্যের ভিত্তি রচনা করেছেন।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে অগ্রাধিকার। সেটি করতে গিয়ে আমরা যে কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেব।’

শামীমা যখন যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে যান, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। তিনি একা যাননি। সঙ্গে আরও গিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসি। তখন খাদিজার বয়স ছিল ১৬; আমিরার ১৫। ধারণা করা হয়, তাদের মধ্যে খাদিজা মারা গেছেন। আমিরার বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায় না। বাবা-মা যুক্তরাজ্যে থাকার সুবাদে সেখানেই শামীমা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই।

২০১৯ সালে সিরিয়ার এক শরণার্থী শিবিরে শামীমাকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। শামীমা এক সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুটি মারা যায়। শামীমা বেগম তিন বছরেরও বেশি সময় আইএসের নিয়ম-কানুন ও শাসনের অধীনে ছিলেন। তুরস্ক হয়ে সিরিয়ার রাক্কায় পৌঁছানোর পর এক ডাচ-বংশোদ্ভূত আইএস যোদ্ধার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
‘আইএস বধূ’ শামীমা বর্তমানে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আল-রোজ নামক বন্দিশিবিরে থাকেন। তিনি আইএসে যোগদান নিয়ে এরই মধ্যে ‘লজ্জিত’ ও ‘দুঃখিত’ বলে বিবৃতি দিয়েছেন। শামীমার সঙ্গে 

সিরিয়ার ওই বন্দিশিবিরে আরও হাজার হাজার মানুষ বাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে আইএস যোদ্ধাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তারাও নিজ নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারছেন না।
আইএসে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে যাওয়া শামীমাকে কানাডার নিরাপত্তা সংস্থার এক গুপ্তচর সিরিয়ায় পাচার করেছিলেন। ২০২২ সালে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই গুপ্তচর শামীমার পাসপোর্টের বিস্তারিত তথ্য কানাডাকে জানিয়েছিলেন এবং আরও ব্রিটিশ নাগরিককে আইএসের হয়ে লড়তে পাচার করেছেন।
ব্রিটিশ সরকার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিলের পর বিষয়টি নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ২০১৯ সালে। কাউকে রাষ্ট্রহীন করা আন্তর্জাতিক আইনের বরখেলাপ– সে সময় এ বিতর্ক উঠলে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়, শামীমা তাঁর বাব-মার সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিতে পারেন। কিন্তু ২০১৯ সালের মে মাসে লন্ডনে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, ‘শামীমাকে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি শামীমাকে চেনেন না। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ব্রিটেনে; শিক্ষা-দীক্ষাও ব্রিটেনে। তিনি কোনোদিন বাংলাদেশে যাননি, বাংলাদেশের নাগরিকত্বও চাননি।;

 

আরও পড়ুন

×