ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিল জলদস্যুদের নতুন দল

হাতে আরও ভারী অস্ত্র, ফের অবস্থান পরিবর্তন

জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিল জলদস্যুদের নতুন দল

ফাইল ছবি

 বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৪ | ০০:৩১

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দস্যুদের নতুন একটি দল। গতকাল বিকেলে আবার জাহাজটির অবস্থান পরিবর্তন করে তারা। বৃহস্পতিবার সোমালিয়ার উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করেছিল জাহাজটি। এরপর জলদস্যুদের আগের দল জাহাজ থেকে নেমে যায়। আরও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ১৫-২০ জনের নতুন দল দায়িত্ব বুঝে নেয়। নোঙর তুলে তারাই জাহাজটির অবস্থান পরিবর্তন করে। এদের সঙ্গে দোভাষী হিসেবে আছে ইংরেজি জানা একজন। 

গতকাল পর্যন্ত জলদস্যুরা মুক্তিপণ হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ দাবি করেনি। এ ব্যাপারে জাহাজের মালিকপক্ষের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেনি তারা। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগির প্রতিনিধির মাধ্যমে মুক্তিপণের প্রস্তাব পাঠাবে। এদিকে ভারতীয় নৌবাহিনী এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে তাদের একটি জাহাজ ছিনতাই হওয়া এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছে।

জাহাজের মালিকপক্ষের মুখপাত্র ও কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার জাহাজটিকে উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করেছিল তারা। এরপর জলদস্যুদের নতুন দল জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। কিন্তু শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে জাহাজটি আবার অবস্থান পাল্টাতে থাকে। কেউ আমাদের সঙ্গে এখনও মুক্তিপণের ব্যাপারে যোগাযোগ করেনি। তবে নাবিকরা সবাই ভালো আছেন। সুস্থ আছেন।’

গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সশস্ত্র জলদস্যুরা মাত্র ১৫ মিনিটে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর পর সোমালিয়া উপকূলের দিকে যাত্রা শুরু করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সোমালিয়ার গ্যারাকাড উপকূলে পৌঁছেছে কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই গ্রুপের আরেকটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেই জাহাজের নাম এমভি জাহান মণি। বড় অঙ্কের মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ থেকে মুক্তি পান ২৫ নাবিক ও প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে জিম্মি অবস্থায় থাকা নাবিকরা হলেন– জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মো. শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ। 

নজর রাখছে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ
এমভি আবদুল্লাহকে সহায়তা করতে কাছাকাছি এলাকায় একটি ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ অবস্থান করছে। ভারতের নৌবাহিনীর মুখপাত্র এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানান, সশস্ত্র জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ক্রুদের নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং যুদ্ধজাহাজ কাছাকাছি এলাকায় আছে। খবর পেয়ে গত মঙ্গলবারই নৌবাহিনীর দূরপাল্লার মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্র্যাফ্ট মোতায়েন করা হয়। এয়ারক্র্যাফ্টটি জাহাজের ক্রুদের অবস্থা জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করে। তবে জাহাজ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়। সেটি ওই অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তায় কাজ করছে। যুদ্ধজাহাজটি বৃহস্পতিবার জিম্মি জাহাজটিকে নজরদারি করতে শুরু করে। জাহাজটি সোমালিয়ার জলসীমায় পৌঁছানো পর্যন্ত যুদ্ধজাহাজ এর কাছাকাছি অবস্থানেই ছিল।
পশ্চিম ভারত মহাসাগরে বেশ কিছু বাণিজ্য জাহাজের ওপর হামলার পর ভারতীয় নৌবাহিনী গত কয়েক সপ্তাহে ওই অঞ্চলে নজরদারি বাড়িয়েছে।


 

আরও পড়ুন

×