প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'রাতুলের রাত রাতুলের দিন' উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে সিনেমা 'অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন'। এটি আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে দেশের ১৫টি সিনেমা হলে। অনুদানের সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন আবু রায়হান জুয়েল। এর মাধ্যমে প্রথমবার বড়পর্দায় নির্মাতা হিসেবে অভিষেক হচ্ছে তাঁর। নতুন এই সিনেমার আদ্যোপান্ত...

সুন্দরবনের রহস্য-রোমাঞ্চের গল্প আগেও সেলুলয়েডের পর্দায় উঠে এসেছে। তবে ভিন্নভাবে সুন্দরবনকে পর্দায় নিয়ে এসেছেন নির্মাতা আবু রায়হান জুয়েল। মুহম্মদ জাফর ইকবালের বহুল পঠিত কিশোর উপন্যাস 'রাতুলের রাত রাতুলের দিন' অবলম্বনে নির্মিত শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন' দেশের ১৫টি সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল।

সুন্দরবনে নৌবিহারে গিয়ে একদল শিশুর ডাকাতের কবলে পড়া এবং উদ্ধার পাওয়ার গল্প নিয়েই সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। সদরঘাট থেকে সুন্দরবন, সুন্দরবন থেকে খুলনা, পানাম সিটি, শেরপুরের নালিতাবাড়ীসহ ঢাকার রাস্তাঘাটে গল্প অনুযায়ী সিনেমাটির দৃশ্যধারণ হয়েছে। নির্মাতা আবু রায়হান জুয়েল বলেন, "শিশুদের সুস্থ বিনোদনের সিনেমা 'অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন'। তবে এটি সব বয়সীরাই দেখতে পারেন। এই গল্পে সিনেম্যাটিক সব উপাদান রয়েছে।

সুন্দরবনে শুটিং অনেক চ্যালেঞ্জিং। বাঘের ভয়, জোয়ার-ভাটার ধকল। এত বড় ইউনিট নিয়ে লঞ্চে অনেক দিন থাকা ছিল কঠিন ব্যাপার। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে কাজটি শেষ করেছি। শুটিংয়ের মাঝপথে করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় বিলম্বিত হয়েছে সিনেমার কাজ।

এরপরও সিনেমায় অভিনয় করা শিশুদের বাবা-মার কাছ থেকে নানা সহযোগিতা পেয়েছি। সব মিলিয়ে ভালো একটি সিনেমা পেতে যাচ্ছেন দর্শক।" এই সিনেমার জন্য প্রখ্যাত সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল 'আয় আয় সব তাড়াতাড়ি' শিরোনামে একটি গান লিখেছেন। সিনেমায় রাতুল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। তিনি বলেন, 'রাতুল চরিত্রের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই পরিচিত।

চরিত্রটা করতে পারা আমার কাছে স্বপ্ন পূরণের মতো। শিশুদের সঙ্গে অনেক আনন্দ নিয়ে কাজটি করেছি। সিয়াম আহমেদ হয়ে আমি সুন্দরবনে গিয়েছি আর শিশুরা আমাকে রাতুল ভাইয়া করে ঢাকায় এনেছে। তাদের সঙ্গে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা ভোলার নয়।'

সিয়াম-পরী ছাড়াও অভিনয় করেছেন শহীদুল আলম সাচ্চু, আজাদ আবুল কালাম, আবু হুরায়রা তানভীর, আশীষ খন্দকার প্রমুখ।

শিশুতোষ সিনেমা নির্মাণ
খুবই দরকার
-মুহম্মদ জাফর ইকবাল

আমার লেখা উপন্যাস নিয়ে সিনেমা 'অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন'। এতে নিজের লেখা একটি গানও রয়েছে। আমি লেখালেখির মানুষ। কিন্তু সিনেমায় তা দেখানো অনেক কঠিন। সিনেমার শুটিংয়ের আগে নির্মাতা আমাকে একটি গান লিখে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তাঁর কথা শুনেই হেসে বলি, আমি কখনও গান লিখিনি। তবে তোমার জন্য চেষ্টা করে দেখতে পারি। এভাবে গানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। গানটি যখন লিখি, তখন জানতাম না এত ভালো হবে। এর দৃশ্যায়নের পর নাতিকে নিয়ে গানটি দেখেছি। ওর খুব পছন্দ হয়েছে।

তখন বুঝলাম, ভালো হয়েছে। শিশুদেরও এটি ভালো লাগবে। শিশুদের নিয়ে সুন্দরবনের লঞ্চে হয়েছে এর চিত্রায়ণ। সবাইকে অনেক প্রাণবন্ত লেগেছে। শিশুদের নিয়ে সিনেমা আমাদের দেশে একদমই কম নির্মিত হচ্ছে। ব্যবসায়িক দিক থেকে লাভবান হন না বলে প্রযোজকরা এ ধরনের সিনেমা নির্মাণে এগিয়ে আসেন না। শিশুদের সৃজনশীলতা বাড়ানোর জন্য শিশুতোষ সিনেমা নির্মাণ খুবই দরকার। একটি সিনেমা যদি সফল হয় তাহলে অন্য নির্মাতারা শিশুতোষ সিনেমা নির্মাণে আগ্রহ পাবেন। আমি চাই, দর্শক সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখুক। শিশুরা তো একা একা হলে যেতে পারবে না। অভিভাবকদের বলব, তাঁরা যেন শিশুদের নিয়ে সিনেমা হলে যান। পুরো সিনেমাটি আমি এখনও দেখিনি। দর্শকদের সঙ্গে দেখব। তাঁদের মতামত জানব। আশা করি ভালো কিছু হবে।

রাতুলের কথা
শুটিংয়ের সময় করোনা মহামারির মধ্যে পড়ে শুটিং ইউনিট। শুটিং ইউনিটে ছিল ১৫ শিশুশিল্পী। তাদের জন্য থাকত আলাদা খাবার। করোনার প্রাদুর্ভাব যখন ভয়াবহ, তখন আমরা মাঝনদীতে শুটিং করছিলাম। হঠাৎ স্থানীয় প্রশাসন থেকে বলা হলো, লঞ্চ ডাঙায় ভিড়তে পারবে না। লঞ্চ থেকে কেউ নামতে ও উঠতে পারবে না। এভাবে তিন দিন পার হয়। লঞ্চে খাবার শেষ! শিশুদের নিয়ে কী যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম, তা বলে বোঝাতে পারব না।

তিশার কথা
অভিনয় ক্যারিয়ারে নানা ধাঁচের গল্পের সিনেমায় অভিনয় করেছি। কিন্তু শিশুতোষ সিনেমায় অভিনয় করা হয়নি। এটি আমার ক্যারিয়ারে নতুন অভিজ্ঞতা যোগ করেছে। সুন্দরবনের কাদাপানি, লঞ্চ ও নদীতে সিনেমার শুটিং করেছি। কাজটি ছিল কষ্টসাধ্য। দর্শক যদি সিনেমাটি দেখেন, সব কষ্ট সার্থক হবে। শুধু শিশুরা নয়; তরুণ, বয়স্ক সবাই সিনেমাটি দেখতে পারেন। আশা করছি, সাহিত্যনির্ভর সিনেমাটি দর্শক উপভোগ করবেন এবং তাঁরা নিরাশ হবেন না।