- আন্তর্জাতিক
- নির্বাচনের পথে হাঁটছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার, রক্তপাতের শঙ্কা
নির্বাচনের পথে হাঁটছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার, রক্তপাতের শঙ্কা

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
সেনা অভ্যুত্থানের দুই বছর পর নির্বাচনের পথে হাঁটছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এ বছরের শেষ নাগাদ এই ভোট হতে পারে। তবে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না, এমনকি নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে রক্তপাতের আশঙ্কাও করছেন বিশ্লেষকরা। স্বল্পকাল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলা দেশটিতে এই নির্বাচন আয়োজন সেনাবাহিনীর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেওয়ার কৌশল বলেও মনে করছেন তাঁরা। খবর এএফপির।
২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশটির গণতন্ত্র আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চির দল বিপুল ভোটে জয় পায়। কিন্তু ভোট জালিয়াতির অভিযোগ ও সহিংসতার জেরে পরের বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। পরে সু চি এবং অন্যান্য শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করে সেনা সরকার। নানা অভিযোগে সু চির কারাদণ্ডও হয়েছে। যদিও নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এখনও প্রমাণ হয়নি।
অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটিতে সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে সেনাবাহিনীর লড়াই চলছে। সেনাবাহিনীর দমনপীড়নে রোহিঙ্গাসহ ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।
সেনা সরকারের দমনপীড়নে এখন দেশটিতে রাজনৈতিক বিরোধিতা নেই বললেই চলে। ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া ও চীনের সমর্থন থাকায় জান্তা সরকারের বৈধতার প্রশ্ন চাপা পড়ে গেছে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী আগস্টের আগেই নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও চলতি বছরের শেষ দিকে ভোট আয়োজনের পরিকল্পনা সেনা সরকারের।
সীমান্তের পাহাড়ি জঙ্গল থেকে শুরু করে সর্বত্র সেনাশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে চেষ্টা চালাচ্ছে বিদ্রোহীরা। দেশের বিভিন্ন অংশের মানুষ ভোট দিতে পারবে না। তারা ভোট দিতে যায়, চাইলেও আক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।
সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভকারী ইয়াঙ্গুনের এক কর্মী বলেন, জান্তা সরকার আয়োজিত ভোট হবে শুধু চাকাসহ একটি গাড়ির মতো, যেখানে আর কিছুই নেই। হামলার আশঙ্কায় তিনি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে পরিস্থিতির কোনো অগ্রগতির সুযোগ নেই।
থাইল্যান্ডের সীমান্তের কাছের জঙ্গলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের সশস্ত্র সদস্যরা। তাঁদের একজন লিন লিন বলেন, মিয়ানমারের রাজনীতি থেকে সামরিক বাহিনীকে বিতাড়িত করতেই তাঁদের এই মিশন। দেশে নির্বাচন আয়োজন করলেও তাঁদের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টায় কোনো প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, সামরিক স্বৈরশাসন নিপাত করাই লক্ষ্য। জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হলেই কেবল তাঁদের অস্ত্র নামবে।
নতুন নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও মিন অং হ্লাইংয়ের জান্তা সরকার এখনও তারিখ নির্ধারণ করেনি। তবে গত সপ্তাহে নির্বাচনী আইন কড়াকড়ি করে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য দুই মাস সময় বেঁধে দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির গবেষক হটইউ থেইন বলেছেন, জান্তার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া বা ভোট না দেওয়ায় জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হতে পারে। এরই মধ্যে নির্বাচনে সহযোগিতাকারীদের হুমকি দিচ্ছে সেনাবিরোধী বিদ্রোহীরা। ভোটের ফলাফল যাই হোক, দেশে সহিংসতা শেষ হওয়ার লক্ষণ নেই।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে তৎকালীন বার্মা। এর পর দেশটি সংসদীয় ব্যবস্থার ভিত্তিতে গণতন্ত্রের পথে হাঁটা শুরু করলেও তা স্থায়ী হয়নি।
মন্তব্য করুন