- আন্তর্জাতিক
- রাজনীতিতে আলাদা, তবে ডাকাতিতে একজোট
যুবদল-যুবলীগ নেতা
রাজনীতিতে আলাদা, তবে ডাকাতিতে একজোট

ডিবির হাতে গ্রেপ্তার মাহতাব উদ্দিন ও যুবলীগের নেতা কাউসার আহমেদ। ছবি- সমকাল
রাসেল কবির বরগুনার আমতলী থানার হলদিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি। কাউসার আহমেদ পটুয়াখালী সদরের স্থানীয় যুবলীগের দাতা সদস্য। রাজনৈতিক মতাদর্শে পার্থক্য থাকলেও দু'জনের পেশাগত আদর্শ এক। এলাকায় ঠিকাদার হিসেবেও পরিচিত হলেও দু'জনই একটি ভয়ংকর ডাকাত দলের সদস্য। রাজনৈতিক মতাদর্শ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ডাকাতি করেন তারা।
সম্প্রতি একটি ডাকাতির মামলার তদন্তে নেমে কাউসারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গ্রেপ্তার অপর তিনজন হল- মুজিবুর রহমান ওরফে নলা মুজিবর, জামাল হোসেন ও মাহতাব উদ্দিন। ডাকাত চক্রের পলাতক সদস্য রাসেল কবিরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান সমকালকে বলেন, দুর্ধর্ষ এই চক্রটিকে ধরতে জানুয়ারি মাসজুড়ে তৎপরতা চালিয়েছে ডিবি। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ধারাবাহিক অভিযানে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। তাদের কাছে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দু'টি মোটরসাইকেল, ১১ লাখ টাকা ও চারটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে কাউসার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, গত বছরের ৬ অক্টোবর বাসে ঢাকা থেকে শরীয়তপুর যাচ্ছিলেন রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় দু'টি মোটরসাইকেলে যাওয়া ডাকাতরা 'প্রশাসনের লোক' পরিচয়ে বাসের গতিরোধ করে। এরপর বাসে উঠে সবার সামনেই ব্যবসায়ীকে মারধর করতে করতে নামিয়ে আনে। একপর্যায়ে তার সঙ্গে থাকা টাকার ব্যাগ কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। লুণ্ঠিত ব্যাগটিতে নগদ ৪১ লাখ টাকা ছিল।
এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। ডিবি লালবাগ বিভাগ মামলাটির ছায়াতদন্ত শুরু করে। তদন্তে জানা যায়, ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার সরঞ্জামের ব্যবসা করেন। ব্যবসা সংক্রান্ত ওই টাকা তিনি পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার এলাকার একটি ব্যাংক থেকে তোলেন। তখন থেকেই ডাকাত দলের সদস্যরা তাকে অনুসরণ শুরু করে। পরে ওই ব্যবসায়ী বাবুবাজার এসে বাসে উঠে শরীয়তপুরের নড়িয়ার উদ্দেশে রওনা হলে ডাকাতরাও তার পিছু নেয়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, তদন্তের একপর্যায়ে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গত বছরের ৪ নভেম্বর ডিবি সূত্রাপুরের একটি ফাস্টফুডের দোকানে অভিযানে যায়। তখন সেখানে থাকা ৪ ডাকাত অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দোকানি ও পুলিশ সদস্যদের ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা হয়। দু'টি মামলারই তদন্ত চালিয়ে যায় ডিবি।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে দুই ডাকাতের অবস্থান জানা যায়। পরে মজিবুর রহমান ও জামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে কাউসারকে পটুয়াখালী ও মাহতাবকে খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা বারবার ঠিকানা পরিবর্তন করায় তাদের ধরতে বাড়তি সময় লেগে যায়। তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত ও লুণ্ঠিত মালপত্র পাওয়া যায়। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা রয়েছে।
মন্তব্য করুন