চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলের চারপাশে কৃষিজমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন, ইটভাটাসহ নানা স্থাপনা। এতে দুই ফসলি জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে।

জানা যায়, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়াই জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে কৃষিজমিতে নানা স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। কৃষকরাও চড়া মূল্য পেয়ে জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন।

এদিকে গুমাই বিলে শ্রেণি পরিবর্তন করে স্থাপনা না করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এছাড়া মাইকিং করে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা ভূমি অফিস। এতে কৃষকের মাঝে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, চন্দ্রঘোনা মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়নসহ রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং নিশ্চিন্তাপুর পাহাড়ের পাদদেশে চন্দ্রঘোনা পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে গুমাই বিল। এখানে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২ হাজার ৪০০ হেক্টরেরও বেশি।

সরেজমিন দেখা যায়, গুমাই বিলে সম্প্রতি বাড়িঘর ও দোকানপাটসহ যত্রতত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিলটি। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, গুমাই বিলের জমি নাল শ্রেণির। এটি অপরিবর্তিত রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বিলে স্থাপনা নির্মাণ প্রবণতা রোধ করতে সম্প্রতি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী গত ২ মাসে এ ধরনের প্রায় ৩টি বসতঘর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ জামশেদুল আলম দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন সময় গুমাই বিলে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মং মার্মার নেতৃত্বেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার জানান, কৃষকের সচেতনতা বাড়াতে ধানি জমিতে স্থাপনা না করতে তাঁরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। কৃষক বাঁচাতে গুমাই বিলের জমিতে স্থাপনা না করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি।

গুমাই বিলের চন্দ্রঘোনা পাটান পাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল কুদ্দুছ (৬৭) জানান, ভূমিদস্যুর কাছে জমি বিক্রি না করে জমিতে দুই ফসল চাষ করলে অনেক লাভবান হবেন। গুমাই বিল রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ও পদক্ষেপে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ জামশেদুল আলম বলেন, গুমাই বিল রাঙ্গুনিয়ার ঐতিহ্য, সমগ্র বাংলাদেশের সম্পদ। কৃষি বাঁচলে দেশ বাঁচবে। যে কোনো মূল্যে গুমাই বিল রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। ফসলের আবাদ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা মানতে হবে।

গুমাই বিল রক্ষায় প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে জানিয়ে ইউএনও আতাউল গনি ওসমানী বলেন, কৃষিজমিতে স্থাপনা নির্মাণ ঠেকাতে ঘন ঘন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এলাকার মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে।