তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছুঁইছুঁই। তুরস্কেই মারা গেছেন ১৬ হাজার ৫৪৬ জন, বাকি ৩ হাজার ৩১৭ জন সিরিয়ায়। এরই মধ্যে ভূমিকম্পের চার দিন পার হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবিত উদ্ধারের আশা একেবারে কম। তবে অব্যাহতভাবে হাজার হাজার উদ্ধারকর্মী বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবারও কয়েক হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাদের অধিকাংশই মৃত। শিশুসহ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। স্বজন ও উদ্ধারকারীদের প্রত্যাশা, অলৌকিক কিছু ঘটুক। আটকে পড়ারা জীবিত ফিরে আসুক।

তুরস্কে জোরেশোরে উদ্ধার তৎপরতা চললেও সিরিয়ায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহও নেই। দেশটির বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ভূমিকম্পের চার দিন পর গতকাল জাতিসংঘের ত্রাণ পৌঁছেছে। বিবিসি জানায়, তুরস্কের সীমান্ত পার হয়ে ছয়টি লরিতে জাতিসংঘ দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পাঠায়। সিরিয়ার ওই এলাকায় এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। সেখানে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে হোয়াইট হেলমেটস গ্রুপ।
দুর্গত এলাকা ছাড়তে চাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। তবে অনেক লোককে সরিয়ে নিচ্ছে প্রশাসন। আলজাজিরা জানায়, তুরস্কের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত শহর কাহরামানমারাস থেকে ২৮ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভূমিকম্পের ৮০ ঘণ্টার বেশি সময় পর ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে গতকাল তুরস্কের দিয়ারবাকির থেকে এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে।

তীব্র ঠান্ডার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। গাজিয়ান্তেপ শহরে গতকাল তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের ৫ ডিগ্রি নিচে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতেও তাঁবু গেড়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন শত শত মানুষ। দুর্গতরা যাতে আশ্রয় নিতে পারেন, সে জন্য বিভিন্ন এলাকায় জিম, মসজিদ, বিদ্যালয় ও কিছু সংখ্যক দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তারপরও তীব্র ঠান্ডার মধ্যেই রাস্তায় আগুন জ্বেলে তারা সময় পার করছেন। অনেকেই ঘুমাতে পারছেন না। মালেক হালিসি তাঁর দুই বছরের কন্যাকে কম্বলে মুড়িয়ে উদ্ধার অভিযান দেখছেন। তিনি বলেন, 'যখন বসে পড়ি, তখন মনে ভেতরে একটা ব্যথা জেগে ওঠে। মনে হয়- কেউ একজন ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে বের হওয়ার জন্য আর্তনাদ করছে!'
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, চার দিন পার হওয়ায় জীবিত উদ্ধারের সময়সীমা পেরিয়ে গেছে। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের আন্তাকিয়া শহরে হাসপাতালের গাড়ি পার্কিংয়ে বস্তায় রাখা উদ্ধার হওয়া মরদেহ দেখছেন স্বজনরা। ওই অঞ্চলে সিরীয় শরণার্থী রানিয়া জাবৌবি পরিবারের আট সদস্যকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর চাচির মরদেহটি তিনি পেয়েছেন; চাচারটি এখনও পাননি।

তুরস্কে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের ৭০টি বেশি দেশ ও সংস্থা। এর মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনও রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকার চীন ও রাশিয়া ছাড়া তেমন কাউকে পাশে পাচ্ছে না। তারা এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহায়তা চেয়েছে। সিরিয়া ও তুরস্ককে সহায়তা করা নিয়ে আগামী মাসে বৈঠক করবে ইইউ। তবে তারা তুরস্কে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে। সিরিয়ার বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে ত্রাণ সংস্থা হোয়াইট হেলমেট গ্রুপ। গতকাল তারা জানায়, শত শত পরিবার এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে। প্রতিটি সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে।

ভূমিকম্পের কারণে নিখোঁজ গানার ফুটবলার খ্রিস্টিয়ান আটসুর খোঁজ এখনও মেলেনি। তাঁর কোচ ভলকান দেমিরেল রয়টার্সকে বলেন, আটসু কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি। তিনি তুরস্কের হাতা শহরে নিখোঁজ হন। আটসু গানার জাতীয় দলের উইংগার। তিনি তুরস্কের একটি ক্লাবে খেলতেন।

ভূমিকম্পে নিখোঁজ ও নিহতদের মধ্যে বহু দেশের নাগরিক রয়েছেন। গতকাল ইতালি পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তোনিও তাজানি জানান, তাঁদের অন্তত সাত নাগরিক নিখোঁজ রয়েছেন। এর আগে ভারত জানিয়েছিল, ভূমিকম্পের পর তাঁদের অন্তত এক নাগরিককে পাওয়া যাচ্ছে না।

গত সোমবার ভোরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্কের হাতা, উসমানিয়া, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির, কিলিস শহর এবং সিরিয়ায় আলেপ্পো, লাটাকিয়া, হামা ও তারতুস অঞ্চল অনেকটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।


বিষয় : অলৌকিকের আশা

মন্তব্য করুন