- আন্তর্জাতিক
- বীরের মর্যাদায় জেলেনস্কি ‘লৌহমানব’ পুতিন
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ
বীরের মর্যাদায় জেলেনস্কি ‘লৌহমানব’ পুতিন

ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ভ্লাদিমির পুতিন
আক্রমণের এক বছরে বড় সাফল্য অর্জনে হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে পশ্চিমা সমরাস্ত্রের ওপর দাঁড়িয়ে আটঘাট বেঁধে নামছে ইউক্রেনও। তবে যুদ্ধের ময়দানের বাইরেও বড় যুদ্ধে লিপ্ত দেশ দুটি। রুশ গোলার আঘাতে বিধ্বস্ত অবকাঠামো মেরামত এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে ঘাম ঝরছে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির। অন্যদিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত অর্থনীতির পতন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও।
প্রায় সাড়ে চার কোটি ইউক্রেনীয় বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে আয়কর ব্যবস্থা। বেড়েছে দারিদ্র্যের হার। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ হার আরও বাড়বে। ইউক্রেনের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে গেছে। এ অবস্থায় গত বছর দেশটির অর্থনীতি ৩০ শতাংশের বেশি সংকুচিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুদের হার ২৫ শতাংশে উন্নীত করার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ম্ফীতির লাগাম টানতে পারছে না। যুদ্ধের মধ্যে দেশটির মূল্যস্ম্ফীতি ২৬ শতাংশের বেশি।
তবে জেলেনস্কির জন্য আশার কথা হলো, ইউক্রেন যুদ্ধকে নিজেদের আত্মমর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে পশ্চিমা দেশগুলো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই ইউক্রেনের পরাজয় দেখতে চায় না। এতে সব রকমের সহায়তা দিতে প্রস্তুত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরই মধ্যে রুশ সৈন্যদের কোণঠাসা করতে ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমানসহ ভারী অস্ত্রের সরবরাহ বাড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সামরিক ও মানবিক সহায়তার বাইরে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ইউক্রেনের সরকারকে পাঁচ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অর্থের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিদেশি দাতারা।
বিশ্নেষকরা মনে করছেন, এরই মধ্যে ইউক্রেনে পশ্চিমা সমরাস্ত্রের ঝনঝনানি দেখতে শুরু করেছে বিশ্ব। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভারী অস্ত্রের মহড়া আরও বাড়তে দেখা যাবে। একইভাবে দেশটিতে পশ্চিমা অর্থের দাপট হয়তো খোলা চোখে দেখা যাবে না। তবে স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা যায়, দেশটিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢুকছে। ফলে উচ্চ সুদহারের মধ্যেও লাগাম টানা যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতির।
রুশ হামলা রুখে দিয়ে জেলেনস্কির প্রতিরোধযুদ্ধ তাঁকে এনে দিয়েছে বিশ্বনেতার মর্যাদা। হামলার শুরুতে রুশ সৈন্যরা চারদিক থেকে রাজধানী কিয়েভ ঘিরে ফেললেও প্রাণভয়ে দেশ ছাড়েননি তিনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তা তিনি ফিরিয়ে দেন। সে সময় তাঁর কয়েকটি কথা বৈশ্বিক গণমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, 'এখানে যুদ্ধ হচ্ছে। আমাদের দরকার গোলাবারুদ; পালিয়ে যাওয়ার বাহন নয়।'
এদিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা-পরবর্তী বাধা রাশিয়ার বেশ কিছু খাতকে বিপর্যস্ত করেছে। এগুলো দেশটির বড় ব্যাংকগুলোকে বৈশ্বিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক সুইফট থেকে বিচ্ছিন্ন, প্রযুক্তি খাতে অচলাবস্থা এবং রাজস্বের বড় উৎস জ্বালানি তেল ও গ্যাস রপ্তানির সক্ষমতা সীমিত করে দিয়েছে। ইউক্রেনে হামলার শুরু থেকেই বিস্তৃত খাতজুড়ে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে বৈশ্বিক বাজারের বাইরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে গত এক বছরে এটি প্রমাণিত যে যতটা আশা করা হয়েছিল, ঐক্যবদ্ধ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মস্কোর ওপর ততটা চাপ তৈরি করতে পারেনি। মনে করা হয়েছিল, এতে রুশ অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ সংকুচিত হবে।
সিএনএনের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটির সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাগুলো স্বীকারও করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট পুতিন তাঁর দেশের অর্থনীতি স্থিতিস্থাপক বলে দাবি করেছেন। গত সপ্তাহে তিনি বলেন, ২০২২ সালের রুশ অর্থনীতির মন্দা ২ দশমিক ৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল। পশ্চিমাদের পূর্বাভাসের চেয়ে অর্থনীতি অনেক ভালো পারফর্ম করছে। অনেকে বলছেন, একনায়ক পুতিন লৌহমানব হিসেবে পুনরায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, কয়েক মাসের মধ্যে এ যুদ্ধ শেষেরও কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। আশা করা যায়, যুদ্ধ শেষে পশ্চিমা সহায়তায় জেলেনস্কি হয়তো দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনীতির চাকা সচল করতে পারবেন। তবে যুদ্ধ শেষেও রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ দীর্ঘ মেয়াদে ভুগতে হবে রুশ প্রেসিডেন্টকে। তারপরও জেলেনস্কি কিংবা পুতিনের অর্থনৈতিক যুদ্ধ জেতার বিষয়টিও সামরিক জয়-পরাজয়ের হিসাবের ওপর নির্ভর করছে।
বিশ্ব পরাশক্তি হিসেবে রাশিয়াকে প্রমাণ করতে ইউক্রেন যুদ্ধে জয় ছাড়া পুতিনের জন্য বিকল্প কোনো রাস্তাও খোলা নেই। ইউক্রেনে হার নিজ দেশে তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তেও হতে পারে। রাশিয়ার একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বিশ্বাস করেন যে তিনি ইউক্রেনে জিততে পারেন।
পশ্চিমা একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক মনে করেন, পুতিন যুদ্ধে জিততে পারবেন না। তবে তিনি জানেন যে তিনি হারতেও পারবেন না।
মন্তব্য করুন