যাঁরা চোখে কম দেখেন, তাঁদের কাছে চশমা যেন চোখেরই অপর নাম। তবে ইদানীং ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে অনেকেই নানা কায়দার বাহারি চশমা পরেন। কারণ যা-ই হোক না কেন, চশমা এখন বেশিরভাগ মানুষেরই নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক চশমার আবিষ্কার, প্রচলন ও বিবর্তনের ইতিহাস–

-বিশ্বের বহু জাদুঘরে অনেক পুরোনো লেন্স এখন শোভা পায়, যেগুলোর মধ্যে কয়েকটি সহস্রাব্দ পুরোনো। তবে নমরুদের লেন্স, যেটি ১৮৫০ সালে ইরাকের নিনেভ নগরীতে আবিষ্কৃত হয়, সেটিই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই লেন্সটি যে স্ফটিক দিয়ে তৈরি, তা খ্রিষ্টের জন্মেরও প্রায় ৭০০ বছর পুরোনো। বর্তমানে এটি লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

- চশমার উৎপত্তি বা প্রচলন বহু পুরোনো; তাই নির্দিষ্ট করে একজনের নাম বলা কঠিন– যিনি প্রথম চশমার উদ্ভাবন করেছেন। হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে চিত্রিত বর্ণনায় প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায় চশমা ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছেন ইতিহাসবিদরা। মিসরীয় সভ্যতায় কাচ ও আতশ কাচের ব্যবহারের প্রমাণও মিলেছে। সে সময় মানুষ চশমা ব্যবহার করতেন। তবে সেই চশমা আজকের চশমার মতো নয়।

- রোমান সভ্যতায় চশমা উদ্ভাবনের গল্পগাথা রয়েছে। রোমান সম্রাট নিরোর একজন শিক্ষক দূরের জিনিস পরিষ্কারভাবে দেখার জন্য জলমিশ্রিত একটি কাচ ব্যবহার করার কথা বলেছিলেন। রোমান গ্লাডিয়েটরদের লড়াই উপভোগ করার সময় সম্রাট নিরো নিজ আসনে বসে বিশেষ কাচ চোখে ব্যবহার করতেন।
- ১২৮৬ সালে জিওর্দানো দা পিসা নামে একজন ইতালীয় ব্যক্তি এক ধরনের চশমা আবিষ্কার করেন। আদিম এক ধরনের লেন্স কাঠ বা চামড়ার ফ্রেমে বসানো হতো।

-মূলত দৃষ্টিশক্তির প্রতিবন্ধকতার প্রতিকার করার উদ্দেশ্যেই দ্য পিসা চশমার ব্যবহারকে আরও সহজ করতে চেয়েছিলেন। চশমার এ নকশাকে আধুনিক চশমার আদিরূপ বলে মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ। তবে এই নকশাতেও চশমা সারাক্ষণ হাতে ধরেই ব্যবহার করতে হতো।

-দ্য পিসা চশমার নকশা তৈরির প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর পর বদল আসে চশমার সাবেকি নকশায়। দুই কানের সঙ্গে জুড়ে যায় চশমার ফ্রেমের দুই হাতলের মতো অংশ। ফলে হাতে ধরে থেকে চশমার ব্যবহারের দিন ফুরিয়ে জন্ম হয় এর আধুনিক নকশার। ১৭২৭ সালে গিরোলামো সাভোনারোলা নামে একজন ইতালীয় বর্তমান সময়ের চশমার নকশা তৈরি করেন। এ কারণেই তাঁকে আধুনিক চশমার জনক বলা হয়।

-ব্রিটিশ চক্ষুবিদ এডওয়ার্ড স্কারলেট ১৭৩০ সালে চশমার ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন আনেন। ফ্রেমের মধ্যে লেন্সকে আবদ্ধ করে কানের ওপর স্থির রাখার জন্য চশমার ফ্রেমের শেষাংশ বাঁকা করে দেওয়ার ডিজাইন তাঁরই করা। তবে তখনও সেই চশমার ডিজাইনে বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছিল। যেমন বর্তমান সময়ের চশমার মতো কবজা না থাকায় এই চশমা ভাঁজ করে রাখা যেত না।

* বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের আবিষ্কার মানুষকে অবাক করে। একই কাচ দিয়ে কাছে ও দূরের জিনিস ভালোভাবে দেখা সম্ভব করে তুলেন তিনি। ১৭৮০ সালের দিকে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন নিজের প্রেসবায়োপিয়া সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তৈরি করেন বিশেষ ধরনের চশমা। ‘বাইফোকাল চশমা’ নামে পরিচিত এই চশমার ওপরের অংশ ব্যবহৃত হয় দূরের জিনিস দেখার জন্য আর নিচের অংশ ব্যবহৃত হয় কাছের জিনিস কিংবা ছোট আকারের লেখাপড়ার জন্য।

* ১৯ শতকেও চশমা ছিল বিলাসিতার বস্তু, সবার কাছে সহজলভ্য ছিল না। কিন্তু শিল্পবিপ্লবে এত পরিমাণে লেন্স ও ফ্রেম তৈরি হয় যে, খেটে খাওয়া মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় বস্তু হিসেবে চশমা তাঁদের সাধ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল।